
ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে অবস্থিত ২০০ বছরের পুরাতন ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ব্রাজিল ‘ জাদুঘরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। পুড়ে গিয়েছে প্রায় দুই কোটি নিদের্শন।
২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ রবিবার স্থানীয় সময় আনুমানিক সাড়ে সাতটায় জাদুঘরটি বন্ধ করার পর আগুন লেগেছে বলে ধারনা করা হয়। ঠিক কি কারনে আগুন লেগেছে তা এখনও জানা যায় নি। আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পুড়ে গিয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ নিদের্শন, বাঁচানো গিয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ।
ব্রাজিলের সংস্কৃতিমন্ত্রী সার্জিও সা লেইতাওকে উদ্ধৃত করে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে সম্ভবত ভবনের ছাদে গরম বাতাস ভর্তি কাগজের বেলুন পড়ে আর তা থেকেই আগুন ধরে যায়। ভবনটিতে কাঠের মেঝে ও প্রচুর কাগজের নথির মতো দ্রুত দাহ্য পদার্থ ছিল।
জাদুঘরের মৎস বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পাওলো বাকাপ আগুন লাগার কিছুক্ষনের মধ্যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দেখেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের কাছে আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি, মই, সরঞ্জাম কোন কিছুই নেই। এমনকি জাদুঘরের নিকটবর্তী পানির কলগুলো নষ্ট হওয়াতে পাশের হ্রদ থেকে ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে পানি নিয়ে আসতে হয়েছে।
বাকাপ বলেন, এই সকল অপর্যাপ্ততার কারণে আমরা নিজেরাই দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকি যা কিছু সম্ভব তা বাঁচানোর আশায়। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা আমাদের নিদর্শন বাইরে আনতে সাহায্য করেছে।
অগ্নিকান্ডের এই ঘটনায় ব্রাজিলের প্রসিডেন্ট মাইকেল তেমার একটি বিবৃতিতে জানান, ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এটি একটি শোকের দিন। ২০০ বছরের কাজ, গবেষণা ও জ্ঞান নষ্ট হয়ে গেল।
লাতিন আমেরিকার অন্যতম বড় জাদুঘরটির দেখভালের দায়িত্ব ছিল রিও ডি জেনেরিও’র ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের। সম্প্রতি বছরগুলোতে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকার বাজেট সংকটে ভুগছে। ২০১৭ সালে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিলো জিডিপির আট শতাংশ। দুই বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ। আগুন লাগার ঘটনায় তহবিল সংকটকেই দায়ী করা হচ্ছে।
জাদুঘরটির মুখপাত্র মার্সো মার্টিন্সের বলেন, ২০১৩ সালে জাদুঘরটির বাজেট এক লাখ তিরিশ হাজার ডলার থেকে কমিয়ে চুরাশি হাজার ডলার করা হয় । যদিও এই বছরের বাজেটর পরিমান গত বছর বাজেটের পরিমান থেকে বৃদ্ধি করার কথা ছিল।
অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর সোমবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমার দেশটির সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, রাষ্টীয় তেল কোম্পানিগুলোকে জাদুঘরটি পুনর্নির্মাণে সাহায্যের জন্য তহবিল প্রদান করতে আহবান জানান। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ একটি টুইট বার্তায় জাদুঘরের পুনর্নির্মাণে সহায়তা করতে বিশেষজ্ঞদের পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত জনতা সোমবার জাদুঘরের গেটের বাইরে জড়ো হতে শুরু করে। তারা জাদুঘরের অগ্নিকাণ্ডের জন্য তহবিল কাটছাঁটকে দায়ী করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাইস্কুলের ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক ৩৫ বছর বয়সী রোসানা হোলান্দা রাজনীতিবিদদের দায়ী করে বলেন,”তারা আমাদের ইতিহাস পুড়িয়ে ফেলছে, এবং তারা আমাদের স্বপ্ন জ্বালিয়ে দিয়েছে।”
বিক্ষোভকারীরা ভবনের ভেতরে ঢুকে অবশিষ্ট নিদর্শন ও পরিস্থিতি দেখতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ফাআ//মাও
