ম্যাচ ১১ | ১৭ জুন
ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড
রোস্তভ স্টেডিয়াম

নিজেদের প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও এবারের আসরের অন্যতম ফেভারিট দল ব্রাজিল। ২০১৪ বিশ্বকাপের ভরাডুবির পর আদেনোর লিওনার্দি বাচ্চি (টিটে নামে অধিক পরিচিত) ব্রাজিল জাতীয় দলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই ব্রাজিল আবার একটা সংগঠিত ও বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবলে দলে পরিণত হয়েছে। টিটের ম্যানেজমেন্টে ব্রাজিল একটি দুর্দান্ত বাছাই-পর্ব পার করে বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠে এসেছে।
দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে ব্রাজিল ১৮টি ম্যাচ খেলে তার মধ্যে ১২টি ম্যাচ জিততে ও ৫টি ম্যাচ ড্র করতে সক্ষম হয়েছে। বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে চিলির কাছে হারার পর ব্রাজিল ১৭টি প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক ম্যাচ অপরাজিত থেকেছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১১টি গোল খাওয়ার বিপরীতে ব্রাজিল গোল দিয়েছে ৪১টি।
আক্রমণভাগের ধার ও সৃজনশীলতা নিয়ে ব্রাজিল দলকে কখনোই চিন্তা করতে হয় না। বরং, ২০০২ সালের পর থেকে প্রত্যেকটি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাদের নড়বড়ে রক্ষণভাগ এবং বেঞ্চে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের অভাব। ব্রাজিল ভক্তদের জন্য সুখবর এই যে, এই বিশ্বকাপে তাদের এই দুইটি জিনিসের একটি নিয়েও ভীত হওয়ার কারণ নেই।
গোলকিপার এলিসনকে পোস্ট সামলানোর ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণে ভরসা করা যেতেই পারে। রক্ষণভাগে সেন্টারব্যাক হিসেবে মিরান্ডা ও থিয়েগো সিলভা ছাড়াও প্রয়োজন পড়লে বেঞ্চ থেকে পিএসজির মার্কিনিয়োসকে মাঠে নামানোর সুযোগ আছে ব্রাজিল কোচের কাছে। দুই আক্রমণাত্মক ফুলব্যাক ড্যানিলো ও মার্সেলোকে সামলাতে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগকে হিমশিম খেতে হবে। অভিজ্ঞ লেফট ব্যাক ফিলিপে লুইজের সম্ভবত মূল একাদশে জায়গাই হবে না।
দুই ফুলব্যাক উপরে উঠে গেলে রক্ষণভাগে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা মোকাবেলা করার জন্য স্কোয়াডে আছেন রক্ষণমুখী মিডফিল্ডার রিয়াল মাদ্রিদের ক্যাসেমিরো। পৌলিনিয়ো ও রেনোতো আগুস্তোও প্রয়োজন অনুযায়ী মাঝমাঠে নানা ভূমিকায় খেলতে সক্ষম। মিডফিল্ডেও ব্রাজিলের বিলাসিতা করার সুযোগ রয়েছে। এই তিনজনের বাইরেও ব্রাজিলের স্কোয়াডে রয়েছেন ম্যানসিটির ফার্নান্দিনিয়ো ও চেলসির উইলিয়ান। আক্রমণভাগে ব্রাজিলের মূল তারকা নেইমার হলেও প্রতিপক্ষের একই মাত্রার ক্ষতিসাধনে সক্ষম খেলোয়াড় আছেন আরও। দুই সেন্টার ফরোয়ার্ড; ফিরমিনো ও গ্যাব্রিয়েল হেসুসের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে ব্রাজিল কোচ এক ‘মধুর সমস্যায়’ পড়বেন। কৌতিনিয়োকে কোথায় খেলালে তা দলের জন্য সবচেয়ে লাভজনক হবে এই নিয়েও ভাবতে হবে টিটেকে। মূল একাদশে শুরু না করলেও তার গতি ও শক্তিমত্তা দিয়ে বেঞ্চ থেকে ভূমিকা রাখতে পারেন এমন একজন খেলোয়াড় হলেন ডোগলেস কস্টা।ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের বহুমুখিতা। প্রতিপক্ষ ও খেলার অবস্থান বিবেচনায় দলে তারা ইচ্ছামতো অদল-বদল ঘটাতে পারবে। চাইলে বদলাতে পারবে ফর্মেশনও।
সুইজারল্যান্ড নিজেও খুব একটা হেলাফেলার দল নয়। ইউরোপিয়ান বাছাই-পর্বের গ্রুপ বি’তে সুইজারল্যান্ড ১০ ম্যাচের মধ্যে ৯টি জিতেছে। ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের কাছে পর্তুগালের মাটিতে হার ব্যতীত সুইজারল্যান্ড গ্রুপ পর্বের বাকি প্রত্যেকটা খেলা জিততে সক্ষম হয়েছে। বাছাইপর্বে পর্তুগালের থেকে স্রেফ গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় সুইজারল্যান্ডকে প্লে-অফ খেলে বিশ্বকাপের মূল আসরে জায়গা করে নিতে হয়েছে। প্লে-অফ পর্বে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছে সুইসরা। ভ্লাদিমিত পেটকোভিচের দলটিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সংখ্যা নেহাৎ কম না। বাছাইপর্বে ২৩ গোল দেওয়া সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বিপজ্জনক গোলদাতা হলেন বেনফিকা স্ট্রাইকার হারিস সেফেরোভিচ। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলা সুইজারল্যান্ডের রক্ষণভাগকে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে উদিনেসে, মিডফিল্ডার ভ্যালন বেহার্মির উপর। সন্দেহাতীতভাবে সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকা জর্ডান শাকিরি। শাকিরি ও ব্রিল এম্বোলোর প্রতিভার উপর নির্ভর করবে সুইস আক্রমণভাগের দক্ষতা।
এর আগ পর্যন্ত ব্রাজিল ও সুইজারল্যান্ড আটবার পরষ্পরের মুখোমুখি হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাসের ভিত্তিতে কোনোভাবেই ব্রাজিলকে এই খেলায় এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। আটবারের দেখায় ব্রাজিল জিতেছে ৩টি ম্যাচ, সুইজারল্যান্ডও জিতেছে ৩টি ম্যাচ। বাকি দুইটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক খেলায় ব্রাজিল এবং সুইজারল্যান্ড একবারই পরষ্পরের মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৫০ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। ২০১৩ সালে একটি প্রীতিম্যাচে দল দুইটির শেষ দেখায় সুইজারল্যান্ড ১-০ জয়লাভ করেছিল।
মুখোমুখি লড়াইয়ে এই ইতিবাচক ইতিহাস নিশ্চয়ই সুইজারল্যান্ডকে অনেক প্রেরণা দেবে। তবে, বস্তুনিষ্ঠ হিসাব বলে দল হিসেবে ব্রাজিল দলের মান ও বৈচিত্র্যের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডে কুলিয়ে উঠতে পারার কথা নয়। আমাদের ধারণা ব্রাজিল এই খেলাটি ২-০ গোলে জিতে যাবে।
মেব//মাও
