সিলেটের কানাইঘাট থেকে নিখোঁজের ৭ দিন পর বাড়ির কাছ থেকে শিশু মুনতাহার (৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশু মুনতাহা সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।
আজ রোববার ভোর ৪টার দিকে নিজ বাড়ির পুকুর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কানাইঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেদ আহমদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলা করতে যায় শিশু মুনতাহা। কিন্তু বিকেল হলেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে শিশু মুনতাহার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। শিশুটির খোঁজ দিতে ফেসবুকে অনেকে পোস্ট দিয়েছিলেন।
শিশুটি নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিতভাবে মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। শিশুটির খোঁজ জানালে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল পরিবার।
সিলেটের কানাইঘাট থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু মুনতাহা আক্তারের (৫) লাশ উদ্ধারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, শিশুটির লাশ মূলত ডোবায় কাদার মধ্যে পুঁতে রাখা ছিল। সন্দেহভাজন এক তরুণী আটক হওয়ার পর ঐ তরুণীর মা ঘটনাকে অন্য রূপ দিতে লাশ ডোবা থেকে তুলে আজ রোববার ভোরে শিশুটির বাড়ির পাশে একটি পুকুরে ফেলে আসতে যান। তবে পথে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন ঐ নারী।
আটক ঐ নারীর নাম আলিফজান (৫৫)। তিনিও কানাইঘাট সদর উপজেলার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের বাসিন্দা। শিশু মুনতাহাও একই গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। শিশু মুনতাহা ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হয়। আজ ভোর চারটার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন আলিফজানের বাড়ি ভাঙচুর করে তাতে আগুন দেন। পরে পুলিশ এসে তাদের নিবৃত্ত করে।
পুলিশ বলছে, লাশ উদ্ধারের সময় শিশু মুনতাহার শরীরে কাদা লেগে ছিল। গলায় রশি জাতীয় কিছু প্যাঁচানো ছিল। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, গলায় রশি জাতীয় কিছু দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ বলছে, ৩ নভেম্বর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল শিশু মুনতাহা। বিভিন্নভাবে খোঁজ করেও পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে। সর্বশেষ শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয় পরিবার থেকে। এর মধ্যে পুলিশ গতকাল শনিবার রাতে প্রতিবেশী মার্জিয়া আক্তার (২৫) নামের এক তরুণীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। মুনতাহাকে প্রাইভেটও পড়াতো মার্জিয়া। মার্জিয়াদের বাড়িতে তার মা আলিফজান ও বৃদ্ধ নানী থাকে।
সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা গণমাধ্যমকে বলেন, শিশু মুনতাহা নিখোঁজের ঘটনায় গতকাল রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিবেশী মার্জিয়া আক্তারকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মেয়েকে আটকের পর মার্জিয়ার মা আলিফজান মনে করেছিল, পুলিশ সবকিছু জেনে গেছে। এজন্য রাতেই ডোবায় পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশ তুলে পুকুরে ফেলার চেষ্টা করেছিলো আলিফজান। কিন্তু প্রতিবেশীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে পুকুরে লাশ ফেলে দেওয়ার আগেই তাকে আটক করে। এ সময় শিশু মুনতাহাকে নিজের কোল থেকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলো নির্মম আলিফজান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ও আলিফজানকে আটক করে।
পুলিশ কর্মকর্তা অলক কান্তি শর্মা বলেন, এ ঘটনায় আটক আলিফজান ও মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় প্রাথমিকভাবে তারা বলেছে, মুনতাহার বাবার সঙ্গে তাদের বিরোধ আছে। তবে কী নিয়ে বিরোধ, তা জানা যায়নি।
নিহত শিশু মুনতাহার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিশু মুনতাহার হত্যাকান্ড নিয়ে সবশেষ যা জানা যায় তা হলো: আজ রবিবার ভোর ৪টার দিকে শিশু মুনতাহার লাশ উদ্ধার করা হয়, শিশু মুনতাহাকে তারই গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার খুন করেছে এবং এই ঘটনায় গৃহশিক্ষিকা, তার মা ও নানীকে আটক করেছে পুলিশ।
মার্জিয়াকে গতকাল শনিবার বিকালে এবং আলিফজান ও কুতুবজানকে আজ রবিবার (১০ নভেম্বর) আটক করা হয়।
ঐ গৃহশিক্ষিকার বাড়ি শিশু মুনতাহার বাড়ির পাশেই। এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করা মার্জিয়া শিশু মুনতাহার বাড়িতে গিয়ে তাকে পড়াতো। মার্জিয়ার মা ও নানী ভিক্ষা করে। সরকারি খাস জমিতে এলাকার লোকজনের সহায়তায় নির্মিত একটি ঘরে তারা বসবাস করতো। কানাইঘাট থানা পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিশু মুনতাহার লাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং গলায় রশি বাঁধা ছিল। তার মাথা অনেকটা থ্যাতলানো এবং পোড়া দাগের মতো রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আউয়াল জানান, মুনতাহা হত্যায় তার গৃহশিক্ষিকা মার্জিয়া আক্তার, মার্জিয়ার মা ও নানীকে আটক করা হয়েছে। মার্জিয়া ও তার মা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তবে কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা এখনো স্পষ্ট নয়। জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।
এদিকে ফুটফুটে ছোট্ট শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের লাশ উদ্ধারের খবরে রবিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই আশেপাশের শত শত নারী, পুরুষ; শিশু মুনতাহাদের বাড়িতে ছুটে যান। নির্মম ও নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুনতাহার মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজনের আহাজারিতে উপস্থিত সবার চোখেই জল আসছে। ক্ষুব্ধ লোকজন মার্জিয়াদের ঘর ভেঙে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
হাসিমাখা মুখের শিশু মুনতাহার ছবি দিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনতাহার খোঁজ চেয়ে পোস্ট করেন। দ্রুত বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মুনতাহার প্রবাসী ভাই তার বোনের সন্ধানদাতার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়ির পাশেই মিলল মুনতাহার লাশ।
আরও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ১৬ কেজি স্বর্ণসহ আটক ১