26.8 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

আওয়ামী লীগের ককটেলবাজি, পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের ককটেলবাজি সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপু ও সাবেক চেয়ারম্যান ওমর আলীর দ্বন্দ্বে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওমর আলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শাহীদ রানা টিপু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওমর আলীকে হারিয়ে পরপর দুবার স্বতন্ত্র ভোট করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন টিপু। কৌশলগত কারণে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান টিপুর সঙ্গে ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের অনুসারীরা। সমপ্রতি একটি হত্যা মামলার প্রধান আসামি হয়ে শহীদ রানা টিপু আত্মগোপনে। সেই সুযোগে দলবল নিয়ে পুরো ইউনিয়ন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতা ওমর আলী। ঘটছে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও। আওয়ামী লীগের প্রকাশ্যে দলবাজি দেখে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।


স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ইউনিয়নে বিএনপির অস্তিত্ব প্রায় শূন্য। দীর্ঘদিন ধরে এই ইউনিয়নে টিপু-ওমরের রাজনীতি চলছে। তবে হত্যা মামলার আসামি হয়ে টিপু চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এখন ওমর আলীর হাতে। তার সঙ্গে আছেন উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য জুয়েল রানা। অজ্ঞাত কারণে পুলিশও এই ওমর আলীকে সমীহ করছে। ওমর-নুরুলের প্রেসক্রিপশনে পুলিশ নিরপরাধ মানুষের নামে মামলা নিচ্ছে।

আওয়ামী লীগে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা জড়ো হয়ে ককটেল বাজি করছে।

চরবাগডাঙা এলাকায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে একাধিক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। সদর উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নুরুল হক, চরবাগডাঙা ইউনিয়ন লীগের সভাপতি ওমর আলী, ইউপি সদস্য জুয়েল রানা, ঢাকার শাজাহানপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা মামলার আসামি আব্দুল লতিফ চাঁপাইনবাবগঞ্জে আত্মগোপনে থেকে ককটেলবাজি করছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এলাকাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 


নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ককটেল ফাটাচ্ছে লোকজন আর আসামি হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ। এসব ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।


চরবাডাঙ্গার বাসিন্দা নেয়ামত আলী বলেন, সারা দেশে যখন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে, ঠিক সে সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে র লোকজন প্রকাশ্যে মিটিং করে ককটেলবাজি ও অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো সমপ্রতি একটি ককটেলবাজির ঘটনায় নিরীহ মানুষকে আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে। তার দাবি, পুলিশকে ব্যবহার করছে নেতারা।


আলোচিত আব্দুল হাকিম পিন্টু হত্যা মামলার বাদীকে তুলে নেয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে থানায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এতে হত্যা মামলার পলাতক ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে হত্যা মামলার পলাতক ১১ আসামি প্রকাশ্যে আসলেন, বাদীকে তুলে নেয়ার চেষ্টা করলেন, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালেন; এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। আগের হত্যা মামলায় আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ  তৈরি হওয়ায় কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে নতুন করে আরেকটি মিথ্যা মামলা করেছেন। পুলিশ সত্যতা যাচাই না করেই মামলা নিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তারা।


এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে মামলা করতে শুক্রবার রাতে থানায় এজাহার নিয়ে যান সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ওবায়েদ পাঠান। এই মামলা নিতে তদবির করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া। এরপরও সোমবার পর্যন্ত থানায় মামলা রেকর্ড হয়নি।


বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান বলেন, চরবাগডাঙ্গায় ককটেলবাজি থামানো ও বিএনপির অস্বিত্ব রক্ষার প্রশ্নে মামলাটি হওয়া জরুরি। আমি এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। রোববার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। আমরা চেষ্টা করছি যেন মামলাটি হয়। আরেক প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, এতদিন কৌশলগত কারণে বিএনপি অনুসারীরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান টিপুর সঙ্গে ছিলেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিথ্যা মামলায় আসামি হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে মামলা নেয়ার বিষয়ে পুলিশকে বলা হয়েছিল। তারপরও পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলা নিয়েছেন। পুলিশের প্রশ্রয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।  


চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বলেন, ৫ই আগস্টের পর যখন সারাদেশের আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে তখন চরবাগডাঙ্গাসহ পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতাদের আধিপত্য চলছে। তারা হাট-বাজারে মহড়া দিচ্ছে। ককটেলবাজিও করছে। পুলিশের প্রশ্রয় ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতার এমন কর্মকাণ্ড সম্ভব নয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে-বলছেন এই বিএনপি নেতা।


চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম অ্যান্ড অপস্‌ এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ককটেল ফাটানো ও হত্যা মামলার বাদীকে হুমকির সত্যতা পাওয়া গেছে। এ জন্য মামলা নেয়া হয়েছে। জড়িত নয় এমন কেউ আসামি হয়ে থাকলে চার্জশিটে বাদ দেয়া হবে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি নয় অভিযোগের সত্যতা পেলে মামলা নেয়া হবে। বিএনপি নেতারা এমন অভিযোগ করতে পারেন ভেবেই আমরা বিএনপি নেতাদের দেয়া অভিযোগটি জিডি করে রেখেছি।

পড়ুন: আওয়ামী লীগে ৯৩ আইনজীবীর আত্মসমর্পণ : ৯ জনের জামিন, ৮৪ জন কারাগারে

দেখুন:আওয়ামী লীগের পদ হারালেন ওবায়দুল কাদের? 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন