বহুল আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা শুরু হয়েছে। ১৬ মার্চ, রোববার সকাল ১১টায় হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চে এই রায় ঘোষণা করা শুরু হয়। বেঞ্চের প্রধান বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান রায় পাঠ করছেন। এর আগে, ২৪ ফেব্রুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল এই শুনানি, যা ৩ মাসের বেশি সময় ধরে চলছিল।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মাত্র ৩৭ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামিরা মিথ্যা অভিযোগ তুলে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ আদালত রায় ঘোষণা করে। আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার অপু, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, সদস্য মোজাহিদুর রহমান, সদস্য হোসেন মোহাম্মদ তোহা, সদস্য এহতেশামুল রাব্বি তানিম, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুর রহমান মাজেদ, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল, এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামছুল আরেফিন রাফাত, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, এবং এসএম মাহামুদ সেতু।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি হলেন, বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, সদস্য আকাশ হোসেন, এবং মোয়াজ আবু হোরায়রা।

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল শুনানি হাইকোর্টে শুরু হয় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে।
ডেথ রেফারেন্সের মাধ্যমে হাইকোর্টে এই রায়ের অনুমোদন নেওয়া হয় এবং আসামিরা দণ্ড কমানোর জন্য আপিল করেন। বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডের রায়কে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করার জন্য এই আপিল ও ডেথ রেফারেন্স গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এ মামলায় ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের শুনানি গত বছর দ্রুত শুরু করা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এর জন্য উদ্যোগ নেন। ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি রায় অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং এটি ডেথ রেফারেন্স হিসাবে নথিভুক্ত হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়, যেখানে আসামিরা তাদের আপিল ও জেল আপিল করতে পারেন।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এই রায় দেশের জনমনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। একদিকে, আবরারের পরিবার ও সমর্থকরা বিচার কার্যকরের জন্য দৃষ্টি রেখেছেন, অন্যদিকে, আসামিরা তাদের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করছেন। এখন হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে এবং এই মামলা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি সম্পর্কিত বিতর্কেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পড়ুন: হাইকোর্টে আবরার ফাহাদ হত্যার রায় রোববার
দেখুন: ভিন্নমত নির্বাসনে! | আবরার ফাহাদ |
ইম/