ইসরায়েলের বাহিনী গাজার ‘ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী’ ইসাম দা-লিসকে হত্যা করেছে, যা একটি ভয়াবহ আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সোমবার মধ্যরাতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ওপর ব্যাপক বোমা হামলা চালায়, যার ফলে ইসাম দা-লিস নিহত হন। দা-লিস গাজায় সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান ছিলেন, যেটি প্রধানমন্ত্রীর সমপর্যায়ের একটি পদ ছিল। তার মৃত্যু ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।
ইসাম দা-লিসের পাশাপাশি গাজার হামাস সরকারের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাও হামলায় নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে গাজার বিচার মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আহমেদ আল-খাত্তা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আবু ওয়াতফা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান বাহজাত আবু সুলতান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মাহমুদ আবু ওয়াতফা হামাস সরকারের পুলিশ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে,
হামাস সরকারের উচ্চপদস্থ এ চার নেতাকে লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে। আইডিএফ আরও জানায় যে, হামাসের মধ্যম সারির কমান্ডারদেরও এই হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল হামাসের সামরিক ও বেসামরিক সরকারের ওপর বড় আঘাত হানা, যাতে গাজায় তারা নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং ইসরায়েলের জন্য কোনো ধরনের হুমকি না হয়।
ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যার পাশাপাশি তারা গাজায় আরো কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যা গাজার রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে ছিল। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গাজার সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাহি মুস্তাহা নিহত হওয়ার পর ইসাম দা-লিস তার স্থলাভিষিক্ত হন। ইসরায়েলি বাহিনী হুমকি দিয়েছে, যদি হামাস তাদের জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে গাজায় এমন হামলা অব্যাহত থাকবে।
এই হামলার ফলস্বরূপ গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনী ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের ওপর বর্বরোচিত বোমা হামলা চালায়, যা পুরো অঞ্চলে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এই হামলায় ৪০০-এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অসংখ্য নারী ও শিশু রয়েছে। আরও ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, এবং হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতি এখন খুবই সংকটাপন্ন, এবং সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিশাল অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলের আক্রমণের পরবর্তী দফায়, বহু পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে এবং আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। হামাস গাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানিয়েছে, এই ধরনের হামলা তাদের প্রতিরোধকে আরও শক্তিশালী করবে, তবে তারা শর্তাধীন আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করতে ইসরায়েলের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আরও জানিয়েছে যে, গাজার সরকারি এবং সামরিক বাহিনীর ওপর এ ধরনের আক্রমণ তাদের জন্য একটি বড় হুমকি, এবং এতে তারা ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। তবে এই হামলার ফলে গাজার মানুষের মধ্যে ভয়াবহ শোক এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক মহলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও উঠেছে।
এছাড়া, গাজায় হামলা চালানোর পর ইসরায়েলি সরকারও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে যে, তারা কোনোভাবেই হামাসের শাসনদখল বা তাদের আধিপত্য গ্রহণ করতে দেবে না।
পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের বিমান হামলা, নিহত দুই শতাধিক
দেখুন: মিশরের সেনাবাহিনী কি ই/স/রা/ইলে আ/ক্র/ম/ণ করবে?
ইম/