ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবিরাম হামলার ফলে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা গত এক সপ্তাহে আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান হামলায় ৭ এপ্রিল পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ৭০০ জনে পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর থেকে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী। আল জাজিরা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, হামলা চলাকালে বহু ফিলিস্তিনি আহত এবং নিখোঁজও হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালানোর পাশাপাশি, দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনিসের মতো শহরগুলোতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করেছে। সোমবার (৭ এপ্রিল) গাজার মধ্যাঞ্চলে নতুন করে বোমাবর্ষণ করা হলে অন্তত বেশ কয়েকজন নিহত হন, তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এতে গাজায় নিহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়। আগের দিন, রোববার, একদিনে ৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
গাজার বিভিন্ন এলাকা, বিশেষত গাজা শহরের পূর্বে আল-নাখিল স্ট্রিট এবং শুজাইয়া পাড়া, লক্ষ্য করে ইসরায়েলি কামান ও বিমান হামলা চালানো হয়। এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আল-নাখিল স্ট্রিটে ইসরায়েলি কামানের গোলাবর্ষণে আট শিশুসহ দশজন নিহত হন এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। একই সময়ে, দেইর আল-বালাহ শহরে বিমান হামলায় পাঁচজন নিহত হয়।
এই হামলার ধারাবাহিকতায়, গাজার বিভিন্ন অঞ্চল যেমন জাবালিয়া, জাওয়াইদা, জেইতুন, এবং খান ইউনিসে হামলা চালানো হয়, যাতে বহু নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে, খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে চালানো হামলায় আটজন নিহত হন, যার মধ্যে শিশুও ছিল। এছাড়া, খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্রে গুলিবর্ষণের ফলে এক ফিলিস্তিনি শিশু নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গাজার হাসপাতালগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কিছু হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ফলে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি, যেখানে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনও সুবিধা নেই এবং প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু বাড়ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি করেছে। তবে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য হামলা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইসরায়েলের আগ্রাসনের ফলে গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে,
যা দিন দিন আরো খারাপ হতে চলেছে। উদ্ধার কাজ চলমান থাকলেও, হাজার হাজার মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে রয়েছেন এবং তাদের প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পড়ুন : গাজার পর লেবাননেও ফের হত্যাযজ্ঞ শুরু ইসরায়েলের
দেখুন : ইসরায়েলের মিশর-ইসরাইল যু/দ্ধে/র দোরগোড়ায়! এক দিনেই তেল আবিব দখলের হু/ম/কি |
ইম/