বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দাবি জানিয়েছেন যে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনার দাবি সমন্বয়কদের নতুন না। এর আগেও সমন্বয়করা দাবি তোলার পর বিভিন্ন পদে পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। এখন দেখার বিষয় রাষ্ট্রপতির বেলায় কি ঘটে। কোন প্রক্রিয়া অপসারণ হতে পারে রাষ্ট্রপতি।
সরকার এবারও তাদের দাবি মেনে নিয়ে রাষ্ট্রপতি অপসারণের পথে হাঁটবে কি?
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলছেন এখনই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না তিনি।
রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি কেন?
মুলত, গতকাল তিন অক্টোবর দুপুরে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি পোস্টে সর্বপ্রথম এ দাবির কথা জানান। তার কয়েক ঘণ্টা পর সমন্বয়ক সারজিস আলমও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একই কথা লিখে পোস্ট করেন।
এরপর-ই এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের দু’জনের পোস্টেই মোট পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বাইরে বাকি চারটি দাবি হল– আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতকরণ, নতুন সংবিধান গঠন, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন ও হাসিনার আমলে করা সব অবৈধ চুক্তি বাতিল।
ঠিক কী কী কারণে তারা হঠাৎ এসব দাবি করে?
বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবির বিষয়ে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলছেন, তারা সকলেই রাষ্ট্রপতি অপসারেনের দাবির সাথে একমত। একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে তাই, তাদের নির্ধারিত রাষ্ট্রপতি থাকলে তা যে কোনও সময় রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন সমন্বয়করা।
তারা মনে করে, রাষ্ট্রপতিকে সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সসম্মানে কিভাবে বিদায় দেওয়া যায়, সেদিকটা নিয়ে ভাবা উচিত। ফ্যাসিজমের একটি সিম্বল রাষ্ট্রপতি। তাই সেই সিম্বলটা থাকা উচিত না। বর্তমান রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে সবার কাছে “গ্রহণযোগ্য” ও “দেশপ্রেমিক” রাষ্ট্রপতি চান তারা।
কোন প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা হবে?
এখন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি মেনে সরকার যদি সত্যিই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে চায়, তবে তারা কোন পথ অবলম্বন করবে? আইনজীবীরা বলছেন, এই মুহূর্তে সেটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়াবে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে হয়। বাংলায় যাকে বলে অভিশংসন।
একাধিক সিনিয়র আইনজীবী মন্তব্য করেছেন অভিশংসনের জন্য সংসদ লাগবেই। তবে রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে তখন আর সংসদ লাগবে না, জানিয়েছেন তারা।
এখন, রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন, তখন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব কে পালন করবেন?
এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা মৃত্যুজনিত কারণে পদ শূন্য হয়, তখন স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্পিকার-সংসদ কোনোটাই নেই। সেইসাথে, স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মাঝে “ওই সংসদ দ্বারাই নতুন রাষ্ট্রপতি” নির্বাচন করতে হবে। অতএব, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের জন্য বৈধ কোনও পন্থা নেই।
তাহলে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারবে কিনা এবং পারলে তা কীভাবে?
আইনজীবীরা বলছেন সংবিধান অনুযায়ী এই সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতি এখন স্বেচ্ছায় বা কারও কথায় চলে যেতে পারেন। কারও কথায় যাওয়া অসম্ভব কিছু না। ক্ষমতায় যারা আছেন, তারা বললেই চলে যাবে। সেনাবাহিনী ও সরকার চাইলে এক সেকেন্ডের ব্যাপার বলেও মনে করেন আইনজীবীরা।
আর এখানে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ ফর্মেশন অব গভর্নমেন্ট-ই লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মাঝে না। কাজেই, ওই সুযোগ নেই। এখানে যা হবে, এমনিতে হবে। তবে এগুলোকে পরবর্তীতে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মাঝে অনুমতি দিতে হবে বলেও মনে করেন আইনজীবীর।
অন্য আরেকজন আইনজীবী বলছেন, এখন অস্বাভাবিক সরকার কাজ করছে, সংবিধানের মাঝ দিয়ে বৈধতা অবৈধতা সাংবিধানিক পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, সেটার জন্য তাদেরকে এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রেফারেন্স নিতে হবে।
সেই রেফারেন্স অনুয়ায়ী তারা একজনকে বাদ বা নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে পারেন। বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় এছাড়া আর কোনও ব্যবস্থা নেই বলেও জানান আইনজীবী।
তবে আপিল বিভাগের এই রেফারেন্স বা সুপারিশ পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আরেকজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দিয়েছিলো, সেই ক্ষমতাই রাষ্ট্রপতির নেই। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর লিখিত উপদেশক্রমে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারে। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা বলেননি বলেও জানান আইনজীবী।
যেহেতু স্পিকার-সংসদ নেই, যে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে?
এই প্রশ্নে আইনজীবীরা বলছেন স্পিকারও না থাকলে ইনচার্জ থাকেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতিকে অফার করতেই হবে। যদি না করে, সেটা হবে আরেকটি ইলিগ্যাল কাজ।