বম, কুকি, চিন, নাগা বা মিজো যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এই জনগোষ্ঠীর লোকজন বৃহত্তর কুকি চিন নাগা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীরই অন্তর্ভুক্ত। ভারত ও মিয়ানমারে কুকি চিন সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সশস্ত্র তৎপরতার আঁচ এখন ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও।
বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফ। বছর দুয়েক আগে পার্বত্য এলাকায় তারা নানা তৎপরতা শুরু করে। চাঁদার দাবিতে অনেককে জিম্মিও করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের অর্থের বিনিময়ে প্রশিক্ষণও দেয় তারা। আসলে কী চায় এই কেএনএফ।
গত বছর গহিন জঙ্গলে কেএনএফের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয়। শান্তি আলোচনা চলার মাঝপথে কেএনএফ হঠাৎ কেন চরমপন্থা বেছে নিল– তা নিয়ে চলছে জল্পনা। রাঙামাটি ও বান্দরবানের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল এ সংগঠনের।
কেএনএফ প্রথম আলোচনায় আসে ২০২২ সালের ২১ জুন। সেদিন রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ৪ নম্বর বড়থলি ইউনিয়ন ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাইজামপাড়া গ্রামে এক দল কেএনএফ সদস্যের ব্রাশফায়ারে তিনজন নিহত হন।মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার গঠিত জনসংহতি সমিতি ভেঙে কয়েকটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছিল। কেএনএফ সেগুলোর মধ্য থেকে আসা একটি গ্রুপ।
জনসংহতি সমিতির সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ৪৪ বছর বয়সী নাথান বম ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালের দিকে এই নাম পাল্টে করা হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। শুরুতে সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার রূপ বদলাতে থাকে। পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণে মদত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষেও লিপ্ত হয় সংগঠনটি। পাশাপাশি নিজেদের সামরিক অবস্থান জানান দিতে শুরু থেকেই পাহাড়ে সশস্ত্র অবস্থানে রয়েছে তারা। মিয়ানমারে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধেও লড়াই করছে কুকি চিন বিদ্রোহীরা।
বান্দরবান সীমান্তের মিয়ানমারের চিন প্রদেশ তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি। এর মধ্যেই হঠাৎ করে থানচি ও রুমার ব্যাংকগুলোতে ডাকাতি এবং থানচি উপজেলা সদরে ঘণ্টাখানেক সশস্ত্র অবস্থানে আশংকা করা হচ্ছে, বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে সংগঠনটির।