কেন আমরা আমাদের সমস্যাগুলো অস্বীকার করি?
যেমন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং পুরো পৃথিবীর জন্য ভয়ঙ্কর এক বিপদের নাম। অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই বিপদের কথা প্রমাণিত এবং প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এর পরও উন্নত বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনেতা একে অস্বীকার করে চলেছেন।
আসলে যখন কেউ কোনো বিষয়ে জড়িয়ে নিজেকে বিপদগ্রস্ত, কোণঠাসা বা অসহায় মনে করতে থাকে তখনি সে বিষয়টির অস্তিত্ব অস্বীকার করতে থাকে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিষয়টি দিয়েই ব্যাখ্যা করি। গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে স্বীকার করে নিলে এটি থামানোর জন্য সব দেশকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। আর উদ্যোগগুলোর মধ্যে প্রধানটি হবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বন্ধ করা। শিল্পকারখানাগুলো গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করছে। এখন শিল্পকারখানাগুলোর উপরেই শিল্পোন্নত দেশগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
অনেক ক্ষেত্রেই এসব শিল্পকারখানার মালিক স্থানীয় রাষ্ট্রনেতা ও তাদের রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। যেহেতু গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে শিল্পকারখানা কমানো অথবা এগুলো পুনর্গঠনের মতো ব্যয়বহুল পথে এগুলোর মালিকদের হাঁটতে হবে, তাই শিল্পকারখানার মালিকদের স্বার্থহানি করে তাদের সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রনেতারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। তাই উপায় না দেখে তারা গ্লোবাল ওয়ার্মিংকেই অস্বীকার করে বসেন!
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এই সমস্যা অস্বীকার করাটা প্রতিরক্ষামূলক বা সংরক্ষণমূলক প্রবৃত্তি। জীবনে বড় কোনো পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সময় নেই।
কিন্তু এই অস্বীকার করাটা যদি অতিরিক্ত এবং লম্বা সময়জুড়ে হয়, তাহলে আবার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা হয়ে ওঠে না।
গবেষকগণ দেখেছেন, আমাদের মস্তিষ্কের আবেগী অংশ যুক্তিবাদী অংশের চেয়ে আগে সক্রিয় হয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কেউ যখন তার বিরোধী পক্ষের সামনে নিজের মত তুলে ধরে তখন সচেতনভাবেই একটি অনৈক্য দেখা দেয়। এরকম হয় কারণ আমরা তখন আমাদের মতামত আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করি। তখন আমাদের প্রতিরক্ষামূলক বা সংরক্ষণমূলক সত্ত্বা আমাদেরকে দিয়ে আবেগী আচরণ করায়। আবেগী আচরণের ফলে চিন্তাশক্তি ও যুক্তি কাজ করে না, তাই আমরা অস্বীকার করার পথ ধরি। বৈজ্ঞানিক তর্ক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক তর্ক পর্যন্ত সবখানেই অস্বীকার করার বিষয়টি এভাবেই ঘটে।