27 C
Dhaka
বুধবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
বিজ্ঞাপন

চাঁদের মালিক কে?

চাঁদের মালিক কে জানার আগে একটা খবর জেনে নেই। গ্রেগরি ডব্লিউ. নেমিটয ২০০০ সালের ৩ মার্চে ৪৯২,১৮৭,৫০০,০০০,০০০,০০০ ডলার মূল্যমানের প্লাটিনামসমৃদ্ধ কিছু জমি রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। এই জমি কোথায়, জানেন?

এই জমি পৃথিবীর বুকে কোথাও নয়। ‘৪৩৩ এরজ’ (433 Eros) নামের একটি গ্রহাণুতে!!!

এর আগে পৃথিবীর আর কেউ পৃথিবীর বাইরে এভাবে ভূসম্পত্তির দাবি তোলেন নি, কিন্তু নেমিটয কোনো একভাবে করেছেন।

এর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে নাসা ওই গ্রহাণুটির গায়ে প্রথম একটি অনুসন্ধানী মহাকাশযান নামিয়েছে। মহাকাশযান নামার স্থানটিকে নেমিটয নাম দিয়েছেন ২৯ নম্বর পার্কিং স্পেস এবং তিনি নাসাকে ২০ ডলারের পার্কিং জরিমানা টিকেট ধরিয়ে দিয়েছেন!

কিন্তু নাসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল এই জরিমানা বাতিল করে দিয়েছেন এই বলে, ৪৩৩ এরজ-এর উপর নেমিটযের দাবির কোনো আইনি ভিত্তি নেই। কেন নেই???

অনেক সংস্থার দেখা পাওয়া যায়, যারা চাঁদে, মঙ্গল গ্রহে বা শুক্রগ্রহের জমি আপনার কাছে বিক্রি করে টাকা নেবে।

এখন চাঁদে জমি কেনার পর আপনি যদি নিজ দায়িত্বে চাঁদে যেতে পারেন, সেখানে বাড়ি বানিয়ে বৌ-বাচ্চা নিয়ে থাকতে শুরু করতে পারেন, তাহলে কেউ আপনাকে বাধা দেবে না, কেউ বলবে না আপনি অপরাধ করছেন, আপনার চাঁদে গমনকে কেউ চাঁদে অনধিকার প্রবেশ বলবে না।

কিন্তু ১৯৭৯ সালের চন্দ্রচুক্তি অনুযায়ী কেউ কখনোই পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যের কোনো স্থানের একক মালিকানা দাবি করতে পারবে না। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১১টি দেশ।

আর ১২০টি দেশের স্বাক্ষরিত ১৯৬৭ সালের মহাশূন্য চুক্তিতে বলা আছে চাঁদসহ মহাকাশ ও এতে বিদ্যমান যেকোনো জ্যোতিষ্কে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা কোনোপ্রকারে ব্যক্তিগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।

অতীতে এক ভূখণ্ডের মানুষ অন্য ভূখণ্ডে গিয়ে স্থানীয়দের তাড়িয়ে সেই ভূখণ্ডে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করত। এটি সম্ভব হত কারণ দখলদারদের হাতে ছিল বন্দুক ও ইস্পাতের মত সরাসরি প্রয়োগ করার মতো ক্ষমতা, জীবাণুর মত অদৃশ্য পরোক্ষ ক্ষমতাও তাদের পক্ষে ছিল।

আজও বন্দুকের ক্ষমতা থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করে অনেকে।

এখন আপনি যদি চাঁদে একখণ্ড জমি দখল করেন, তাহলে আপনি কি তা রক্ষার জন্য সেখানে চন্দ্রপুলিশ এবং চন্দ্রসেনাবাহিনীর প্রবর্তন করবেন? কাজটি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয় কারণ মহাশূন্য চুক্তি মোতাবেক মহাশূন্য ও এতে বিদ্যমান যেকোনো জ্যোতিষ্কের উপর অধিকার মানবজাতির সবার। আমরা সবাইই এর মালিক।

তবে অনেকেই মনে করেন মহাশূন্যের উপর সাধারণ মালিকানা প্রতিষ্ঠার ফলে মহাশূন্যে অনুসন্ধান বা গবেষণাকাজে পর্যাপ্ত উন্নতি হয়নি।

মহাশূন্য চুক্তিটি তৈরি করা হয়েছে অ্যান্টার্কটিকা চুক্তির উপর ভিত্তি করে। এই চুক্তিতে বলা আছে যে, বরফে ঢাকা এই মহাদেশটি পার্থিব কোনো প্রকার বিরোধের অংশ হবে না। বিরোধ অবশ্যই ভাল কিছু নয়। আবার মুনাফার সুযোগ না থাকায় কেউই সেখানে কোনো বিনিয়োগ করেনি। অন্যদিকে মুনাফার আশা থাকায় উত্তর মেরুতে অনেক কিছু হচ্ছে।

এরকমই লাভের সুযোগ থাকলে এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরি হলে মহাকাশ পর্যটন বা চাঁদে হোটেলের মত আকর্ষনীয় প্রকল্প হয়তো দেখা যেত এতদিনে।

তবে, মহাকাশে মালিকানা প্রতিষ্ঠার একটি উপায় কিন্তু আছে!

মহাকাশ চুক্তিতে বলা আছে, মহাকাশে স্পেস শাটল, অনুসন্ধানী যান বা এরকম যা কিছু পৃথিবীর কক্ষপথে ছেড়ে আসা হয় সেসবের মালিকানা চিরকাল এর প্রকৃত মালিকেরই থাকবে। ফলে কক্ষপথে মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হলে আপনাকে সেখানে কিছু পাঠাতে হবে এবং কক্ষপথটি ব্যবহার করতে হবে।

আরেকটি বিষয়। যদি অন্য কোনো গ্রহ থেকে ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী অর্থাৎ কোনো এলিয়েন কোনোদিন আপনার সামনে হাজির হয়, কিন্তু আপনি যদি তাকে খুন করে ফেলেন, এবং পরিবারের সকলকে নিয়ে প্রাণীটিকে কেটেকুটে রান্না করে খেয়ে ফেলেন, তাহলে ঘটনাটি কি মৃগয়া নাকি মার্ডার???

এর উত্তর আমিও জানি না!!!

কারণ, পৃথিবীতে মানবাধিকার আছে, কিন্তু এলিয়েনাধিকার নেই!

তবে বিষয়টিকে সাংস্কৃতিক ধ্বংসসাধনের আওতায় ফেলা যেতে পারে!

কিভাবে? একটা গল্প বলি: ২০০৩ সালে চ্যাপম্যান ভ্রাতৃদ্বয় যুদ্ধ নিয়ে গয়ার আঁকা কিছু চিত্রকর্ম ক্রয় করে সেগুলোকে বিকৃত করে। চ্যাপম্যান ভ্রাতৃদ্বয়ের এই কর্মকান্ড শেষ পর্যন্ত বেআইনি ঘোষিত হয়নি কারণ তারা চিত্রকর্মগুলো কিনে নিয়েছিল।

কিন্তু ঐতিহাসিক চিত্রকর্ম বিকৃত করলে প্রতিক্রিয়া হয় গুরুতর কারণ আমরা জাদুঘরে এধরণের চিত্রকর্ম স্পর্শ করতেও পারি না।

কে সেই প্রথম ব্যক্তি যিনি চাঁদকে প্রথম স্পর্শ করেছিলেন?

চন্দ্রলোকের অভিযাত্রীরা? কিন্তু তারা তো স্পেসস্যুট পরে ছিলেন।

নাসা জানিয়েছে টেরি স্লেজাক পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রথম চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছিলেন। টেরি ছিলেন নাসার একজন টেকনিশিয়ান, চাঁদ থেকে ফিরে আসা চন্দ্রযানের মাটি তার হাতে লেগে যায়। চন্দ্রাভিযাত্রী নীল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিন তাদের অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরে যখন তাদের স্পেসস্যুট খোলেন তখন স্যুটে লেগে থাকা চাঁদের ধুলা-মাটি তাদের গায়েও লেগে গিয়েছিল। তারা জানিয়েছিলেন, চাঁদের মাটির গন্ধ পোড়া বারুদের মত। এমনটি হওয়ার কারণ সম্ভবত পৃথিবীর বাতাসে থাকা অক্সিজেনে চাঁদের মাটি জারিত হয়ে গিয়েছিল।

চাঁদের মালিক কে

এত কথার সার কথা হল, নীল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিন যে চাঁদের মাটি গায়ে মেখেছিলেন, চাঁদের ধুলোভরা বাতাস শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন, সেটিই ছিল মানবজাতির পক্ষে প্রথম কোন মহাজাগতিক বস্তুকে স্পর্শ করা। কিন্তু আসলেই কি তাই???

প্রতি বছর শত শত টন মহাজাগতিক গ্রহাণু ও ধুলা-মাটি পৃথিবীতে আসছে, আমাদের বায়ুমন্ডলে সেগুলো পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হচ্ছে, যথেষ্ট বড় হলে তাদের কোনোটি পৃথিবীতে আস্ত পৌঁছানোর পর আমরা সেগুলো দেখতেও পাচ্ছি, এসব ছাই-ধুলা-মাটি নোংরা করছে আমাদের ঘরবাড়িও, আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সেসব নিজেদের মাঝে গ্রহণ করে চলেছি, হয়তো সেসব আমাদের নখের ফাঁকে লেগে আছে- আমরা তো এই দিক দিয়ে চন্দ্রাভিযাত্রীদের চেয়েও এগিয়ে আছি।

শ্বাস-প্রশাসের সঙ্গে আমাদের শরীরে ঢোকা এসব মহাজাগতিক ধুলিকণা এক সময় চাঁদে ছিল!

অর্থাৎ এসব একসময় চাঁদের অংশ ছিল!!!

দেখুন: চাঁদের দিকে ছুটছে ভারতের চন্দ্রযান ৩, পৌঁছতে সময় লাগবে ৪০ দিন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন