19 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

জাবিতে বাস আটকে ছাত্রলীগ স্টাইলে ক্ষতিপূরণ দাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবিতে) বাস আটকে ছাত্রলীগ স্টাইলে ক্ষতিপূরণ দাবি উঠেছে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে রাজধানী পরিবহণের ৩৭টি বাস আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোবাইল হারানোর মিথ্যা অভিযোগ এনে ‘ছাত্রলীগ স্টাইলে’ জুনিয়রকে দিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবির অভিযোগ উঠেছে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তরা হলেন, ইনস্টিটিউটের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংসদের অর্থ সম্পাদক শেখ নাজমুস সাকিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আল আমিন মিয়া। তারা উভয়েই নিষিদ্ধ সংগঠন শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ১১ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসগুলো আটকায় শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৯টার দিকে মালিকপক্ষ আসলে প্রক্টর অফিসের হস্তক্ষেপে অশোভন আচরণের জন্য মুচলেকা নিয়ে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, সন্ধ্যায় বাস আটকানোর সময় ইনস্টিটিউটের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সরলকে একটি বাস ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে সামান্য আহত হন তিনি। এসময় ঐ বাস ড্রাইভারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিতণ্ডার পরে বাসের চাবি ও বাসে থাকা দুইটি মোবাইল নিয়ে নেয় শরিফুল। পরে আটককৃত বাসগুলো ছাড়াতে মালিকপক্ষ আসলে জব্দ করা বাসের চাবি আর মোবাইল ফোন ফেরত দিতে যান সরল। তবে এসময় অভিযুক্ত নাজমুস সাকিব ও আল আমিনের নির্দেশে ইনস্টিটিউটের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুম ও শিপন বাস আটকের সময় ‘গুগল পিক্সেল সেভেন’ মডেলের মোবাইল হারানোর মিথ্যা অভিযোগ দিতে বলে শরিফুলকে। যার মূল্য হিসেবে ‘৪২ হাজার টাকা’ ক্ষতিপূরণ দাবি করে তারা।

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল বলেন, বাস আটকানোর সময় কোনো মোবাইল হারিয়ে যায়নি। আমার কাছে থাকা বাসের চাবি আর ড্রাইভারের মোবাইল প্রক্টর অফিসে জমা দিতে গেলে নাজমুস সাকিব আমাকে জানান মিটিংয়ে ইতোমধ্যে আমার একটা ফোন হারানোর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ৪২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। এটা মিটিংয়ে স্বীকার না করলে সিনিয়রদের সমস্যা হবে ও ইনস্টিটিউটের ইমেজ নষ্ট হবে। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কম পাওয়ায় আমি বিষয়টি তাদের কথামতোই উত্থাপন করি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল আমিন মিয়া ও শেখ নাজমুস সাকিব উভয়েই কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

আল আমিন মিয়া জানান, আমি বাস আটকানোর সময় উপস্থিত থাকলেও কোনো অর্থ দাবি করিনি। তবে আমি প্রক্টর অফিসের সভায় ছিলাম‌। সেখানে জানতে পারি শরিফুলের ফোনটি বাসে হারিয়ে গেছে। এখানে আমার কোনো অপরাধ নাই।

ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, প্রথম বর্ষে গণরুমে থাকাকালীন আমাকে জোর করে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হতো। আমি ছাত্রলীগের কোনোকিছুর সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাকে পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।

আরেক অভিযুক্ত শেখ নাজমুস সাকিব শরিফুলের অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেন, বাস আটকানো ও মিথ্যা মোবাইল হারানোর অভিযোগের বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই। বাস আটকানোর পরে খবর পেলে আমি প্রক্টর অফিসে যাই।

এদিকে ১৫ জুলাই রাতে ভিসির বাসভবনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, পূর্বে চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও বিক্রি প্রভৃতি ঘটনায় আল বেরুনী হল থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষিত হন শেখ নাজমুস সাকিব। যা হল প্রশাসনের দাপ্তরিক তালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে।

নিষিদ্ধ সংগঠনের সাবেক কর্মী থাকার বিষয়ে শেখ নাজমুস সাকিব বলেন, ছাত্রলীগের সাথে বর্তমানে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথম বর্ষে গণরুমে থাকাকালীন সময়ে তাদের মিটিং মিছিলে গিয়েছি। তবে আন্দোলনে আমি কখনো হামলা করিনি ও হামলার সাথে জড়িত ছিলাম না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমি আন্দোলনের বিরোধিতা করিনি। এ বিষয়ে এখন আর কেউ কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না।

দুজনেই ইনস্টিটিউটের ছাত্রসংসদের সম্পাদকীয় পদে থাকায় সংসদ কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা- এমন প্রশ্নে সংসদের সহ-সভাপতি সোহেল রানা বলেন, নৈতিকতার প্রশ্নে সিএলসি ছাত্র সংসদ কোনো আপস করবে না। তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে যাচাইপূর্বক সংসদের সভায় শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রশাসন থেকে তালিকাভুক্তি প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ব্যবস্থা নিবে।

এনএ/

আরও পড়ুন: খুলনা রেলস্টেশনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ছাত্রলীগ ভয়ংকর রূপে ফিরবে

দেখুন: রাতে যা হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে!

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন