জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কলা ও মানবিক অনুষদের দেওয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচারবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) মামলার অভিযুক্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগেই তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মামলায় রূপান্তর হয়েছে। পরবর্তীতে কোর্ট থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযুক্ত অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি।
ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি বলেন, “মাসজুড়ে চলা গণ-আন্দোলনের পর গঠিত নতুন প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করার পরও বহিষ্কারাদেশ ও মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়নি। একই প্রশাসন, যারা তাদের অফিসের দেয়াল থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সরিয়েছে, এখন বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ফেলার অভিযোগে মামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি তাদের দ্বিচারিতার প্রমাণ।”
এ বিষয়ে অমর্ত্য রায় বলেন, ধর্ষণ ও স্বৈরাচারবিরোধী গ্রাফিতি আঁকায় আমাদের নামে মামলা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। আমরা মামলা প্রত্যাহারসহ এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
এদিকে অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৪ টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহিদ মিনার চত্বর প্রদক্ষিণ করে নতুন প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৩ দফা জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা।
দাবিগুলো গুলো- অতি দ্রুত অমর্ত্য-ঋদ্ধের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, দ্রুত সময়ে সিন্ডিকেট সভা ডেকে তাদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করতে হবে, এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।
এসময়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান দাবিগুলোর বিষয়ে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানালে আন্দোলনকারীরা ফিরে যান। তখন উপাচার্য মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাসও দিয়েছেন।
এদিকে অমর্ত্য-ঋদ্ধের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্য সচিব তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি অপসারণের মামলায় অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্যের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। তাদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা নেই। আমরা ইতোমধ্যেই ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি)-এর সঙ্গে মামলাটি প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ব্যক্তিগতভাবে এটি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, চলতি বছরের গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের (অমর্ত্য রায়-ঋদ্ধ অনিন্দ্য) নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৫ ফ্রেব্রুয়ারী দুপুর থেকে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে টানা চারদিন অনশনে বসেছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতা৷
সেসময়, ২০ ফেব্রুয়ারি এক বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় অমর্ত্য রায় এবং সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলিকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ এছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আইনে অভিযোগ দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে সেটি মামলায় পরিণত হয়েছে।
টিএ/