ছিলেন সামান্য আইসক্রিম বিক্রেতা। পরবর্তীতে ট্রাক ড্রাইভার। কিন্তু বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় পদ পদবী ব্যবহার করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যান তিনি। যুবলীগ পরবর্তীতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি খোরশেদ বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সাবেক সাংসদ আবু রেজা নদভীর ভয় দেখিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালাতেন। এক পর্যায়ে লোহাগাড়া থানার ওসির ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
আওয়ামলীগ সরকারের পতনের পর নিজের অপকর্ম ঢাকতে ষড়যন্ত্র শুরু করছেন খোরশেদ। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের র্শীষ নেতা শাহাজাহান চৌধুরীর ইমেজ ক্ষুন্ন করতে তার পিএস আরমানকে জড়িয়ে সম্প্রতি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।
উল্লেখ্য গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে লোহাগাড়া উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি ও ব্যবসায়ী খোরশেদ বলেন, গত ৫ আগস্ট তাঁর দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালানো হয়। ১২ আগস্ট এ ঘটনায় আদালতে মামলা করেন তিনি। এরপর ১৭ আগস্ট খোরশেদ নামের একজন তাঁকে ফোন করে জানান, মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর একান্ত সচিব আরমান উদ্দিন কথা বলতে চান। পরদিন একটি রেস্তোরায় গিয়ে আরমানের সঙ্গে দেখা করেন খোরশেদ। আরমান এ সময় ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। ওই ব্যবসায়ী দাবি করেন, মামলায় না জড়ানো ও দোকানের মালামাল উদ্ধার করে দেওয়ার শর্তে ২১ আগস্ট ৮ লাখ টাকা দেওয়ার মৌখিক চুক্তি হয়। ২৮ আগস্ট নগরের বাকলিয়া এলাকার একটি ভবনের বাসায় নেওয়া হয় খোরশেদকে। সেখানে আরমানের উপস্থিতিতে তাঁকে মারধর করা হয়
এ নিয়ে আজ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্যে, আবদুল্লাহ মো. আদিল বলেন খোরশেদের অভিযোগ গত ৫ আগস্ট স্থানীয় জামিলসহ অজ্ঞাত আনুমানিক ২৫-৩০ জন মিলে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রাইয়ান ট্রেডার্স ও রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ লুটপাট করে। এ ঘটনায় তিনি গত ১২ আগস্ট আদালতে মামলা দায়েরে করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর একান্ত সচিব আরমান উদ্দিনকে ২৯ জুলাই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। ৮ আগস্ট কারাগার থেকে বের হন। ৫ আগস্ট কারাগার থেকে কিভাবে বের হয়ে তার সঙ্গে দেখা করল?
সাবেক যুবলীগ নেতা খোরশেদ প্রকাশ খুইশ্যাকে বহুমুখী ঠকবাজ উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, খোরশেদ দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি শাহজাহানের সাথে তার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যবসায়ীক সহযোগী হিসেবে দুদকের মামলায় আসামী।
এছাড়া খোরশেদ জুলাই বিপ্লবের সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরাসরি রাজপথে ভুমিকা রেখেছে এবং সে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে লক্ষ্যে ছাত্র জনতার উপর হামলা করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকটা মামলার আসামীও।
বিগত ১৫ বছর ধরে লোহাগাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ ছাত্র জনতার উপর মামলা, গ্রেপ্তার বানিজ্য, রিমান্ড বানিজ্য, রি – এরেস্ট বানিজ্যের মূল হোতা ওসি শাহজাহানের একান্ত সহযোগি হিসেবে ছিল যা সর্বজনস্বীকৃত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মো. আদিল বলেন, লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি শাহজাহান রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের গ্রেপ্তারের পর খোরশেদের সাথে বসিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। একদিকে ওসি অন্যদিকে সাংসদ আবু রেজা নদভীর ভয় দেখিয়ে মানুষের উপর অন্যায় অত্যাচার, জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। যুবলীগ নেতা বাদশাহ খালেদের যোগসাজশে গরীব অসহায় মানুষের জায়গা জমি বিভিন্ন ভাবে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে তার অসংখ্য নজীর এলাকার সরজমিনে তদন্ত করলে বের হবে।
আদিল বলেছেন, ১৭ বছর আগে খোরশেদ আলম ওরফে ডাম্পার খুইশ্যা ছিলেন সামান্য আইসক্রিম বিক্রেতা। পরবর্তীতে সে একটা ট্রাকের ড্রাইভার ছিল। কিন্তু আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় আঙ্গুল ফুলে তলা গাছ বনে যান।
খোরশেদ আমিরবাদ এলাকার জামায়াত কর্মী আব্দুল জলিলকে গ্রেফতার করিয়ে বাদশাহ খালেদ সহ মিলে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ক্যাশ ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। হাজীর পাড়া এলাকার একটা সামাজিক সংগঠনের ঈদ শুচ্ছোর ব্যানার দেওয়াকে কেন্দ্র করে তথা আবু রেজা নদভীর ব্যানারের উপর ব্যানার দেওয়াতে রাকিব ও সায়েম নামে ছোট দুই ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার মত জঘন্য ঘটনার সাথেও জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, শ্রমিকলীগ নেতা খোরশেদ আরেক যুবলীগের সন্ত্রাসী বাদশাহ খালেদে চরম্বার একজন সহজ সরল প্রবীন ইট ভাটার ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ২৫ লাখ টাকার শেয়ার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে, ইটভাটা দখল করে। সেই ইট ভাটায় ওসি শাহজাহানের ৫০ লাখ টাকার শেয়ার রয়েছে। ওসি শাহজাহানের শেয়ার সৌদিয়া গাড়ির জি এম খোরশেদের নামে এখনো আছে।
এদিকে নগর জামায়াতের আমীর ও সাবেক হুইপ শাহাজাহান চৌধুরীর পিএস আরমান নাগরিক টিভিকে জানান, খোরশেদকে আমি ভাল করে চিনিনা। তবে নিশ্চিত একটি এজেন্ডা নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে খোরশেদ। যা লোহাগাড়াবাসী সহ জামায়াতের নেতাকর্মী সমর্থকরা অবগত ও সজাগ। তার সমস্ত অপকর্ম নিয়ে লোহাগাড়াবাসী মুখ খুলছে এখন।
এনএ/