26 C
Dhaka
সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

জাহাজে নাবিক হত্যা মামলার অগ্রগতি নেই, তদন্তে গড়িমসি

২০২২ সালের ১ জুন সিঙ্গাপুরের জাহাজে বাংলাদেশি নাবিক আব্দুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঢাকার বিমানবন্দর থানায় অপমৃত্যু মামলা হলেও দুই বছরেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টার ঘুরেও হত্যা মামলা করতে পারেনি নিহতের পরিবার। প্রায় দুই বছর পর হাইকোর্টে রিট করেন নিহতের ভাই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হালিমুর রশীদ।

পরে ২০২৪ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট বিমানবন্দর থানাকে হালিমুর রশীদের করা অভিযোগটিকে এজাহার হিসেবে গণ্য করে হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এ মামলায় জাহাজে কর্মরত ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বিমানবন্দর থানা থেকে গত ৮ মাস আগে মামলাটি তদন্তভার যায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে।

আলোচিত এ মামলা নিয়ে তদন্তকারী সংস্থা টালবাহান করেছেন বলে অভিযোগ করেন হালিমুর রশীদ। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি সিটিটিসি। তিনি আদৌ তার ভাই হত্যার বিচার পাবেন কিনা এমন প্রশ্নও করছেন। শনিবার (১৫ মার্চ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এমন অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, তদন্তের অগ্রগতি জানতে সিটিটিসির প্রধানের কাছে গেলে তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় অর্থের প্রলোভন ও বিভিন্ন ধরণের হুমকিও দেয়া হচ্ছে তাদের। নিহত নাবিক আব্দুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার হরিপুরের বীরমুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর-রশীদের ছেলে।    

হালিমুর রশীদ বলেন, তার ভাই মো. আব্দুর রহমান ২০২১ সালের ৭ই অক্টোবর সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমটি কনসার্টো জাহাজে নাবিক হিসাবে যোগ দেন। হক অ্যান্ড সন্স নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে ওই ট্যাঙ্কার জাহাজে নিয়োগ পান তিনি। জাহাজটিতে থাকা ২৫ জনের মধ্যে একজন কোরিয়ান নাগরিক ছিলেন। বাকি ২৪ জন ছিলেন বাংলাদেশি।

যোগদানের কিছুদিন পরই পরিবারের সদস্যদের আব্দুর রহমান জানান, জাহাজে কয়েকজন সহকর্মীর সাথে তার মনোমালিন্য হয়েছে। ঘটনাটি এক পর্যায়ে ঝগড়া ও হুমকির পর্যায়ে চলে যায়। পরিবারের পরামর্শে তখন জাহাজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন আব্দুর রহমান। একইসাথে জাহাজ থেকে তাকে নামিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন।

এরপর ২০২২ সালের পহেলা জুন জাহাজটি থেকে ফোন করে আব্দুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় যে তাকে অচেতন অবস্থায় ডেকে পাওয়া গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তাকে পাওয়া গেছে এবং বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তিনি মারা যেতে পারেন বলেও জানানো হয় তখন। সে সময় জাহাজটি তাইওয়ানের জলসীমায় ছিল। চীনের একটি বন্দরে যাচ্ছিল এটি।

নিহতের ভাই আরো বলেন, ঘটনা জানার পর জাহাজের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন শামীম পারভেজের কাছে জানতে চাইলে বিষাক্ত গ্যাসের কারণে মারা গেছে জানায়। ডিউটিরত অবস্থায় খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানায়। কিন্তু সে যেখানে কাজে গেছে সেখানে ডিউটি অফিসারের আদেশেই গেছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যু নিয়ে ধু¤্রজাল তৈরি করে। একবার বলছে মাথায় আঘাতজনিত কারণে, আরেকবার বলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেছে, একেকবার একেক ধরনের কথা বলেছিল তারা।

পরে ২০২২ সালের ১০ জুলাই মরদেহটি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। সেদিন বিমানবন্দর থানা লাশ গ্রহণ করে একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়।

হালিমুর রশীদ আরো বলেন, এ ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন অধিদপ্তরও তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কমিটির প্রতিবেদনের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশে বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তকারী বিশেষজ্ঞ সার্জনের মতে নাবিক আব্দুর রহমান শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছেন এবং মৃত্যুর পূর্বে তার গায়ে আঘাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এছাড়া কেমিকেল অ্যানালাইসিস রিপোর্টে যেহেতু কোনো বিষের প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই আব্দুর রহমান কীভাবে শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেলো তা সারকামস্ট্যানসিয়াল এভিডেন্স (পারিপার্শ্বিক প্রমাণ) এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে মতামত দিয়েছে সেই কমিটি। আব্দুর রহমানের মৃত্যু কমিটির কাছে রহস্যজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার জন্য দুর্ঘটনার রাতে জাহাজের ভয়েস ডাটা রেকর্ডার এবং সে রাতের সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করা জরুরি। এমন তদন্ত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনের আওতাভুক্ত বলে কমিটি মনে করে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষিত তদন্তকারী সংস্থার মাধ্যমে পুনঃতদন্ত করাতে সুপারিশ করে কমিটি। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ময়নাতদন্তে শ্বাসরোধে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।

এছাড়াও কোরিয়া স্ট্যান্ডার্ড ইন্সপেকশন সার্ভিসেস যে তদন্ত করেছে তাতে বলা হয়েছে, বিষাক্ত গ্যাসের বিষক্রিয়ায় নাবিক আব্দুর আব্দুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। একইসাথে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত করার কথা বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

হালিমুর রশীদ আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে এই জাহাজটিতে নাবিক নিয়োগ দিয়েছিল হক অ্যান্ড সন্স নামে সরকার অনুমোদিত একটি কোম্পানি। বিমানবন্দর থানায় অপমৃত্যু মামলার পর এই কোম্পানির কাছে জাহাজের ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ, কন্ট্রোল রুমের ভয়েস রেকর্ড এবং ডিউটি রেজিস্টার চাওয়া হয়। কোম্পানিটি এসব নথি এবং রেকর্ড তাদের কাছে নেই বলে জানিয়েছে। এভাবেই তারা হত্যার সব ধরণের প্রমাণ গোপন করছে। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থা কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। এ জন্য তিনি তার ভাই হত্যার বিচার নিয়ে সন্দিহান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত নাবিক আব্দুর রহমানের মা মোসা. আম্বিয়া খাতুন, ভাই মো. আব্দুর রাশেদ, স্ত্রী নূরে মাহমুদা নাহরিন নাহার, শ্বশুর মরিব হোসেন কাজল, শ্বাশুড়ি জান্নাতুল মাওয়া।

পড়ুন : চাঁপাইনবাবগঞ্জ পিন্টু হত্যা রহস্য উদঘাটন দাবি

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন