19 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে ২১ জেলার মানুষ

এপ্রিলের প্রথম দিনে উত্তরাঞ্চল দিয়ে শুরু হয়েছিল মৃদু তাপপ্রবাহ। ওই তাপপ্রবাহ ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের প্রায় সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ২১ জেলার অধিবাসীরা তাপপ্রবাহের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায় তাপপ্রবাহ না থাকলেও তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। সরকারের কাছে দেওয়া তাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে কষ্ট ও বিপদে আছেন। এর বড় অংশ প্রচণ্ড গরমের কারণে দৈনন্দিন কাজ করতে পারছে না। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সংস্থাটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান তাপপ্রবাহের চিত্র তুলে ধরেছে এবং সারা দেশের তাপপ্রবাহ নিয়ে একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। মানচিত্রে দেখা যায়, তাপপ্রবাহের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে ২১ জেলা। আর ১৪টি জেলা ২১ জেলার চেয়ে কিছুটা কম ঝুঁকিতে আছে। বাকি জেলাগুলো কিছুটা কম গরমের ঝুঁকিতে রয়েছে।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মানচিত্র অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি উষ্ণতার বিপদে থাকা ২১ জেলা হচ্ছে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও বাগেরহাট।

শুধু তা–ই নয়, গত ২৯ দিনে সারা দেশের গড় তাপমাত্রা এই প্রথম প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ৭৬ বছরের আবহাওয়ার তথ্য রয়েছে। সে তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা ২৯ দিন দেশের বড় অংশজুড়ে তাপপ্রবাহ ছিল না। এবারই প্রথম অতি উষ্ণতার কবলে পড়ল দেশের বড় অংশ।

তাপমাত্রাবিষয়ক গবেষক ও ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি, মালয়েশিয়ার অধ্যাপক শামসুদ্দিন শহিদ বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা বহুমাত্রিক বিপদ তৈরি করছে। নিয়মিতভাবে এ ধরনের অতি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল থাকলে এ জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হবে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার জন্য সরকার যেমন আগাম প্রস্তুতি নেয়, গ্রীষ্মকালের জন্যও রাস্তায় পানির ব্যবস্থা করা, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং স্বেচ্ছাসেবক তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ২৯ এপ্রিল দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫০ শতাংশের বেশি। এই আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা কোথাও থাকলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা থেকে ওই এলাকার অধিবাসীদের জন্য লাল সতর্কতা (রেড অ্যালার্ট) জারির পরামর্শ রয়েছে। ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের তাপপ্রবাহের শিকার দেশগুলোতে এ ধরনের তাপমাত্রায় লাল ও কমলা সতর্কতা জারি করেছে।

গবেষকেরা বলছেন, দেশের বড় শহরগুলোতে গরমের কারণে মানুষের ভোগান্তি ও বিপদ সবচেয়ে বেশি। গত বছরের জুনে কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়; অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়; চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের এক যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছিল, দেশের পাঁচটি প্রধান শহরের ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রচণ্ড গরমের বিপদে রয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগর থেকে মেঘ ও জলীয় বাষ্প আসা বেড়ে যাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে গেছে। ফলে গরমের অনুভূতি বেড়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর তাপমাত্রা ছিলো ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দেশের ইতিহাসে উষ্ণতম মাস শেষ হতে যাচ্ছে। ২ মে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা চার-পাঁচ দিন থাকতে পারে। এতে উষ্ণতা কমবে। আর বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর আবারও তাপপ্রবাহ শুরু হতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়াগত কারণে সবচেয়ে কম তাপপ্রবাহপ্রবণ এলাকা হওয়ার কথা ছিল ঢাকা শহরের। আর রাজশাহী ও সিলেট সবচেয়ে তপ্ত শহর হওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে তার উল্টো। ঢাকার ৭৮ শতাংশ বা ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষ তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে পড়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে ওই হার মাত্র ৪৫ শতাংশ বা ৪ লাখ মানুষ এ ঝুঁকিতে পড়েছে।

কোন শহরে কী কারণে তাপপ্রবাহের ঝুঁকি বাড়ছে, তা-ও গবেষণায় উঠে এসেছে। ঢাকার অপরিকল্পিত নগরায়ণ, গাছপালা উজাড়, সড়কের দুই পাশে গাছপালা না থাকা এবং জলাভূমি ধ্বংস করাকে তাপপ্রবাহের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। ঠিক উল্টো চিত্র রাজশাহীতে। পরিকল্পিত নগরায়ণ, গাছপালা রোপণ এবং বাতাসপ্রবাহের যথেষ্ট ব্যবস্থা থাকায় সেখানে তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে থাকা মানুষ সবচেয়ে কম।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব কাজী শফিকুল আজম বলেন, গরমের কারণে ঢাকাসহ ৩০টি জেলায় তাপপ্রবাহ তীব্র ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব এলাকার দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা দরকার। তাঁদের জন্য খাওয়ার পানি ও গরম থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয়কেন্দ্র করতে হবে। নয়তো ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদের আশঙ্কা বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন