29 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

তুগলক সাম্রাজ্য: ‘চিরস্থায়ী’ হওয়া স্বপ্ন ছিল যে শাসকদের

তুগলক রাজবংশের শাসনামল মধ্যযুগীয় ভারতীয় উপমহাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৩২০ সাল থেকে ১৪১৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করা তুগলক শাসকেরা তাদের সামরিক শক্তি এবং প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন। মঙ্গোলদের পরাজিত করে এবং প্রায় সমগ্র উপমহাদেশ জয় করে তুগলক সাম্রাজ্য এক সময় অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে তাদের রাজত্ব বিভিন্ন বিতর্ক এবং কেলেঙ্কারির জন্যও পরিচিতি পায়। তুগলক শাসকেরা চিরস্থায়ী সাম্রাজ্য গড়ার স্বপ্ন দেখলেও, তাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং কার্যকলাপ সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি।

তুগলক সাম্রাজ্যের উত্থান

তুগলক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গিয়াসউদ্দিন তুগলক। দিল্লির সুলতান হওয়ার পর তিনি মঙ্গোল আক্রমণ প্রতিহত করতে সফল হন এবং সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। তার শাসনামলে বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণ করা হয়, যেমন তুঘলকাবাদ দুর্গ। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র মোহাম্মদ বিন তুগলক সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তার শাসনামল ছিল সবচেয়ে আলোচিত।

মোহাম্মদ বিন তুগলকের পরীক্ষা-নিরীক্ষা

মোহাম্মদ বিন তুগলক তার শাসনামলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান, যা পরবর্তীতে বিতর্কিত হয়। তিনি দিল্লির সিংহাসন থেকে রাজধানী দৌলতাবাদে সরিয়ে নেন, যা সম্রাজ্যের জন্য একটি বড় ধরনের প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও তিনি এর মাধ্যমে সমগ্র সাম্রাজ্যকে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছিলেন, তবে এটি কার্যকর হয়নি এবং জনগণের জন্য বিশাল দুর্ভোগের কারণ হয়।

তিনি তামার মুদ্রা চালু করেন যা রৌপ্য মুদ্রার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তামার মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং রাজস্ব আদায়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তার আরেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল কৃষি কর বৃদ্ধি করা, যা কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

ফিরোজ শাহ তুগলকের শাসন

মোহাম্মদ বিন তুগলকের পর ফিরোজ শাহ তুগলক সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার শাসনামলে সাম্রাজ্যের সংস্কারমূলক কার্যক্রমে গুরুত্ব দেয়া হয়। তিনি বিভিন্ন খাল নির্মাণ করেন, যেমন উত্তর ভারতের যমুনা থেকে হরিয়ানার হিসার পর্যন্ত খাল। এছাড়া তিনি হসপিটাল, মাদ্রাসা এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সাধন করেন।

সাম্রাজ্যের পতন

তগলুগ সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ

তুগলক সাম্রাজ্যের পতন ঘটে বিভিন্ন কারণে। মোহাম্মদ বিন তুগলকের প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি সাম্রাজ্যের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। তার পরবর্তী শাসকেরা সঠিকভাবে রাজ্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারেননি। সম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। ফিরোজ শাহ তুগলকের শাসনামলের পর তুগলক সাম্রাজ্য আরও দুর্বল হয়ে যায় এবং অবশেষে তিমুর লং-এর আক্রমণে দিল্লি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

ঐতিহাসিক মূল্যায়ন

তুগলক সাম্রাজ্য তার স্থাপত্য, সংস্কার এবং সামরিক পরাক্রমের জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। গিয়াসউদ্দিন তুগলক এবং ফিরোজ শাহ তুগলকের শাসনামলে বিভিন্ন স্থাপত্য এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটলেও, মোহাম্মদ বিন তুগলকের বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হয়। তাদের শাসনামলে সৃষ্ট স্থাপত্যকর্ম এবং অবকাঠামো আজও তাদের মহত্ত্বের পরিচয় বহন করে চলছে।

তুগলক সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও, তাদের বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক পরীক্ষানিরীক্ষা, কেলেঙ্কারি এবং দুর্বল পরবর্তী শাসনের কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি। এই ইতিহাস আমাদেরকে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যের উত্থান এবং পতনের কাহিনী জানায়, যা মধ্যযুগীয় ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন