20.7 C
Dhaka
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

ত্বকী হত্যা: ন্যায়বিচারের আশায় পরিবার

নারায়ণগঞ্জের কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বর্ষপূর্তির একদিন আগে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব জানিয়েছিল, এই হত্যা মামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পেরেছেন তারা। যেকোনো দিন আদালতে জমা পড়বে অভিযোগপত্র। কিন্তু এরপর এই মামলার আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ত্বকী হত্যায় ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের বাঁচাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নির্দেশে’ এই তদন্ত আটকে ছিল বলে বরাবরই অভিযোগ করেছেন ত্বকীর পরিবার।

১০ বছর পর গত কয়েকদিনে এই মামলায় চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। র‍্যাব জানায় গ্রেপ্তার হওয়া সবাই আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। আজমেরী ওসমান প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা।

র‍্যাব বলেছে, অনেক বছর আটকে থাকলেও তারা এখন মামলাটির তদন্ত দ্রুত শেষ করতে চায়। র‍্যাব -১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেছেন তিন মাসের মধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

র‍্যাবের এই তৎপরতায় ন্যায়বিচারের ব্যাপারে আশাবাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।

বৃহস্পতিবার তিনি গণমাধ্যমেক বলেন, ‘একবছরের মাথায় র‍্যাবের তদন্তে সব বেরিয়ে এসেছিল। ওসমান পরিবারের টর্চার সেলে ত্বকীকে কীভাবে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় লাশ ফেলা হলো সবই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল র‍্যাব। কিন্তু যখনই শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেন, তখনই এই মামলার সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পেরিয়েছে একমাস।

এই সময়ের মধ্যেই ত্বকী হত্যা মামলাটির অগ্রগতি দেখে ‘ন্যায়বিচার’ নিয়ে আশাবাদী রাব্বি বলেন, ‘র‍্যাবের তৎপরতায় আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তাছাড়া, এই মামলার তদন্ত শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্ধ ছিল। এখন যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের নাম অপর এক আসামির জবানবন্দিতে এসেছিল কিন্তু তারা কখনওই গ্রেপ্তার হননি। তদন্ত কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সঠিকভাবে এগোচ্ছে বলে মনে করি। আমরা চাই, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা সবাই যেন আইনের আওতায় আসে। নিরীহ ও নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় ত্বকী। পরদিন তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় ত্বকী পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ২৯৭ পেয়েছিলেন। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ত্বকীর লাশ উদ্ধারের পর রফিউর রাব্বি বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

পরে ওই বছরের ১৮ মার্চ শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে সম্পূরক অভিযোগ জমা দেন।

পরে রফিউর রাব্বির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ২০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে।

মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে র‍্যাব -১১। সম্প্রতি মামলাটির অগ্রগতি নিয়ে র‍্যাব -১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশার সাথে কথা হয় ডেইলি স্টারের এ প্রতিবেদকের।

তিনি জানান, এক বছরের মাথায় ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব। কিন্তু এর পর ‘প্রচ্ছন্ন চাপে’ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত আর এগোয়নি।

‘২০১৩ সালেই তৎকালীন অধিনায়কের অধীনে ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত মোটামুটি শেষ পর্যায়ে চলে এসেছিল। তখনই ওই অফিসার বদলি হন। এর পর তদন্ত কাজটা একেবারে থেমে যায়নি কিন্তু গতিটা মন্থর হয়ে যায়। আমরা তদন্তে অনেকের নাম পেয়েছিলাম কিন্তু সবাইকে তখন খুঁজে পাইনি। গতবছর থেকে র্যাব হেডকোয়ার্টারের তদন্ত শাখা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমাদের ব্যাটেলিয়নের লিগ্যাল অফিসার তদন্ত শাখার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন, গাইডলাইন নিয়ে এসেছেন। এই মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ করার জন্য একটি কমিটিও করা হয়েছে।’

গত ৮ থেকে ১১ সেপ্টেম্বর; এই চারদিনে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে শাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া, কাজল হাওলাদার ও জামশেদ শেখ নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। চারজনকেই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব।

এর আগে ত্বকী হত্যার কয়েকমাসের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর, তায়েবউদ্দিন জ্যাকি, রিফাত বিন ওসমান ও সালেহ রহমান সীমান্ত। সবাই পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর লিটন এবং ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনা থেকে হত্যা পর্যন্ত সব ঘটনার বিবরণও দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন