ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, নাসের হাসপাতালের সার্জিক্যাল ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে। রবিবার (২৩ মার্চ) রাতে হওয়া এই হামলায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। হামলার ফলে হাসপাতালে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা চিকিৎসা কার্যক্রমে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তাদের হামলার লক্ষ্য ছিল একটি হামাস সদস্য, যিনি ওই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ইসরায়েলের দাবি, এই হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য হামাসই দায়ী, কারণ তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ করছিল। এই হামলার পর হাসপাতালটির সার্জিক্যাল ভবনে আগুন ধরে যায়, যা গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো জটিল করে তুলেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর বাকি হামলার মতো এই হামলাও গাজার চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, ফলে আহতদের চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সহিংসতা এবং বিমান হামলা গাজার সাধারণ জনগণের জন্য এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, এবং এখানে মানবিক সঙ্কট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে বিমান হামলা চালানোর পর গাজার স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আক্রান্ত ও আহতদের জন্য তীব্র সংকট তৈরি করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১২০০ নাগরিক নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। তবে, ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে হামাসের মতানৈক্য দেখা দেয়, যার ফলে ১৮ মার্চ থেকে ফের বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

দক্ষিণ গাজার চিকিৎসকরা জানান,
এই হামলার পর থেকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং চিকিৎসকরা ম্যানপাওয়ার সংকটের মধ্যে পড়েছেন। হাসপাতালগুলোর উপরে একাধিক বিমান হামলার কারণে চিকিৎসা সেবা শীঘ্রই অপ্রতুল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণকে মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং যুদ্ধবিরতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, গাজায় চলমান এই সহিংসতা শুধু ফিলিস্তিনি জনগণের জন্যই নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এখন পর্যন্ত, দক্ষিণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলা এবং অবরোধের ফলে গাজার সাধারণ জনগণ এবং হাসপাতালগুলোর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। এর ফলে, গাজার হাসপাতালগুলোতে যেসব আহত ব্যক্তি চিকিৎসা সেবা পাচ্ছিলেন, তাদের জন্য এটি একটি অস্বাভাবিক ও বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
পড়ুন: জোড়া সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৬৩ রানের টার্গেট দিয়েছে নিউজিল্যান্ড
দেখুন: দক্ষিণ এশিয়ার সুপারপাওয়ার হবে বাংলাদেশ? |
ইম/