28 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

দিল্লি সালতানাতের পতন ও মুঘল সাম্রাজ্যের শুরু

১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে কাবুলের শাসক জহিরুদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ইব্রাহিম লোদির বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করে দিল্লি সালতানাতের পতন ঘটান এবং উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা করেন। এই যুদ্ধটি উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল, যা পরবর্তী কয়েক শতাব্দীর জন্য অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে পরিবর্তন করে দেয়।

দিল্লি সালতানাতের প্রেক্ষাপট

দিল্লি সালতানাতের শাসনামল ১২০৬ সালে কুতুবউদ্দিন আইবেকের হাত ধরে শুরু হয় এবং প্রায় ৩২০ বছর স্থায়ী হয়। এই দীর্ঘ সময়ে মমলুক, খলজি, তুগলক, সৈয়দ এবং লোদি বংশের শাসকরা দিল্লি সালতানাত পরিচালনা করেন। ইব্রাহিম লোদি ছিলেন লোদি বংশের শেষ শাসক। তার শাসনামলে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং আঞ্চলিক বিদ্রোহের কারণে সালতানাত দুর্বল হয়ে পড়ে।

বাবরের আগমন

বাবর ছিলেন তিমুর লং-এর বংশধর এবং কাবুলের শাসক। উপমহাদেশে তার আগমনের প্রধান কারণ ছিল উত্তর ভারতে নিজের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। বাবর ভারত আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং দিল্লির শাসক ইব্রাহিম লোদির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার সিদ্ধান্ত নেন। বাবরের সেনাবাহিনীতে মাত্র ২৫,০০০ যোদ্ধা ছিল, যা তুলনামূলকভাবে ইব্রাহিম লোদির লাখেরও বেশি সেনাবাহিনীর তুলনায় ক্ষুদ্র ছিল।

পানিপথের প্রথম যুদ্ধ

১৫২৬ সালের ২১শে এপ্রিল পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবরের নেতৃত্বে মুঘল বাহিনী এবং ইব্রাহিম লোদির বিশাল বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। যুদ্ধে বাবর তার সামরিক কৌশল এবং নবপ্রবর্তিত বারুদ ও কামানের ব্যবহার করে লোদির বিশাল বাহিনীকে পরাজিত করেন। যুদ্ধের ফলে ইব্রাহিম লোদি নিহত হন এবং দিল্লি সালতানাতের পতন ঘটে।

মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা

পানিপথের যুদ্ধের পর বাবর দিল্লি ও আগ্রা দখল করেন এবং নিজেকে মুঘল সম্রাট ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। বাবরের শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যা তার পুত্র হুমায়ূন এবং পৌত্র আকবরের শাসনামলে আরও বিস্তৃত ও সুসংহত হয়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

দিল্লি সালতানাতের পতন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপমহাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। মুঘল সম্রাটরা স্থাপত্য, শিল্প, সাহিত্য এবং প্রশাসনিক দক্ষতায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তাদের শাসনামলে তৈরি হওয়া স্থাপত্যকর্মগুলি, যেমন তাজমহল, আজও বিশ্ববাসীর বিস্ময় ও প্রশংসা অর্জন করে চলেছে।

বাবরের পানিপথের প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ এবং মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা উপমহাদেশের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। দিল্লি সালতানাতের পতনের মাধ্যমে এক দীর্ঘমেয়াদী শাসনামলের অবসান ঘটে এবং মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান উপমহাদেশের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করে। এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি সামরিক বিজয় নয়, বরং এটি ছিল একটি নতুন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার শুরু, যা ভবিষ্যতে উপমহাদেশের গতিপথকে পরিবর্তন করে দেয়।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন