দ্যা লবস্টার , রোমান্টিক ঘরানার সিনেমা। কিন্তু একেবারেই রোমান্টিসিজম-সর্বস্ব নয়। সিনেমাটি একই সাথে সুররিয়াল ও ডার্ক কমেডিভিত্তিক। এটি নির্মাণ করেছেন গ্রীক নির্মাতা ইয়োগোর্স লান্থিমোস।
শিল্প প্রকাশের সবচেয়ে সফল মাধ্যম সিনেমা। আর এই সিনেমার ভাষা নির্মাণের জন্যেই নির্মিত হয়েছে অনেক সিনেমা।
তিনি ১৯৭৩ সালে এথেন্স জন্মেছেন। বাবা ছিলেন বাস্কেটবল খেলোয়ার। হেলিনিক ফিল্ম স্কুলে ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে কাজ করেছেন বিজ্ঞাপন ও টেলিভিশন সিরিজ নিয়ে। ২০০৫ সালে যৌথ পরিচালনায় নির্মাণ করেন প্রথম সিনেমা। নাম – মাই বেস্ট ফ্রেন্ড। ২০০৯ সালে নির্মাণ করেন ডগটুথ। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এ সিনেমা জিতে নেয় কান চলচ্চিত্র উতসবের সম্মাননা। সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনয়ন পায় অস্কারে।
ডগটুথ আন্তজার্তিক মহলে পরিচিত করে গ্রিক এই পরিচালকে । তারপর ২০১১ সালে নির্মান করেন আল্পস। সিনেমাটি জিতে নেয় অসলো এওয়ার্ড। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সিনেমাটি সেরা চিত্রনাট্যের পুরষ্কারও পায়।
ইয়োগোর্স লান্থিমোস ২০১৫ সালে নির্মাণ করেন প্রথম ইংরেজি ভাষার চলচিত্র – দ্য লবস্টার। যদিও দ্য লবস্টার আইরিশ, স্প্যানিশ, ইংরেজি ও গ্রীক ভাষাতেও মুক্তি পেয়েছিল।
লান্থিমোস তার সকল চলচ্চিত্রে দর্শকদের সামনে একটি নতুন জগত হাজির করেন। দ্য লবস্টারও এ এক আজব দেশের গল্প। এই রাজ্যে প্রিয়জনকে হারানো একটি অপরাধ। কেউ তার সঙ্গী হারিয়ে ফেললে তার জীবনই বিপন্ন হয়ে ওঠে। এসব একাকী মানুষদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় একটি হোটেলে। আটকে রাখা হয় তার মত অন্যান্য ‘নিঃসঙ্গ’ ব্যক্তিদের সাথে। এইসব ‘একাকী’ মানুষদের মধ্যে থেকেই কাউকে জোটাতে হবে তার নতুন সঙ্গী। এবং ঠিক পঁয়তাল্লিশ দিনে খুঁজে নিতে হবে সঙ্গী। নইলে আর মানুষের সমাজে জায়গা হবে না। ঠিক সময়ে সঙ্গী জুটাতে না পারলে অন্য লোনারদের খুন করে বাড়িয়ে নিতে হবে সময়। তাই যেভাবে হোক জীবন সঙ্গী খুঁজে বের করাই তখন মানুষের লক্ষ্য হয়ে ওঠে ।
দ্য লবস্টার
এই সিনেমাটির হোটেলটি আসলে আমাদের সমাজেরই চেহারা। যে করেই হোক সবাইকে যেন রোবটের মত প্রেমে জড়াতেই হবে। সেই প্রেমে নেই, শ্রদ্ধার সম্পর্ক, পরস্পরের প্রতি সম্মান। এমনকি বিশ্বস্ততা না থাকলেও চলবে। যেখানে বার বার বুঝিয়ে দেওয়া হয় একবিবাহভিত্তিক সম্পর্কই সবচেয়ে সঠিক। যেন এই বিশেষ ‘গুণ’টিই মানব সমাজকে বাকিদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। সম্পর্ক যতই তলানিতে গিয়ে ঠেকুক না কেন সেটি রক্ষা করতেই হবে।
দ্য লবস্টার সিনেমার মূখ্য চরিত্র এ অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা কলিন ফেরেল ও অস্কার বিজয়ী রাচেল ভাইজ । আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন, গ্রীস, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি এই সিনেমাটি। গোটা শুটিং হয়েছে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন লোকেশনে। এ সিনেমাটি জিতে নেয় , ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, কান-এর জুরি আওয়ার্ড, ইউরোপিয়ান ফিল্ম এওয়ার্ডসহ নানা পুরষ্কার। পাশাপাশি পায় বিপুল দর্শকপ্রিয়তা। ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এর এ সিনেমা বক্স অফিস থেকে আয় করে ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
দারুন সিনেমাটগ্রাফী আর আবহ সংগীতের ভরপুর এ সিনেমার প্রযোজনা , সংলাপ ও পরিচালনা করেছেন ইয়োগোর্স লান্থিমোস নিজেই।
তরুন এই নির্মাতার ক্যারিয়ারে এটি মাত্র পঞ্চম সিনেমা। এর মধ্যেই তিনি চমকে দিয়েছেন দর্শক-সমালোচকদের। আসছে দিনগুলোতে দ্য লবস্টারের মতো চমকপ্রদ অনেক সিনেমাই তিনি নির্মাণ করে যাবেন- সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।