সংস্কার কমিশনের সুপারিশে নতুন আইন প্রণয়নের পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এমনটা জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। আর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, সরকার-প্রশাসন সবাই দায়িত্ব পালন না করলে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না ।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন এন্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত “নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই” শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য প্রদানের সময় তাঁরা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, নির্বাচনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিচার করার চূড়ান্ত ক্ষমতা ইসির থাকা উচিত। ভোটের সময় মন্ত্রণালয়কে ইসির আওতায় রাখা দরকার। এ সময় সব দলের সংসদ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের কথাও বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অন্তত তিন বছর একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য না থাকলে তাকে মনোনয়ন দেয়া উচিত হবে না। এটি করা গেলে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ ও তৃনমূল থেকে প্রার্থী ওঠে আসবে। ডিসি’রা নির্বাচন করে এই কথা ঠিক না৷ আইনে তিন শ’ আসনে তিন শ’ রিটার্নিং অফিসার দেওয়া যাবে৷ আবার ডিসিদের দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ইসির সঙ্গে কাজ করে ১৫ দিনের মধ্যে কোনো অনিয়ম করলে ইসি যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় সেটাই যেন চুড়ান্ত শাস্তি হয়। এতে অনেক অনিয়ম কমে আসবে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ভোটের সময় সরকারের ওপর কিছুটা খবরদারির এখতিয়ার দিতে হবে। তিন ধাপে ইসি নিয়োগ করা যেতে পারে৷ তৃতীয় ধাপে পার্লামেন্ট থেকে চুড়ান্ত প্রস্তাব যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে৷ প্রথস ধাপে সকলের নামই প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, দলের প্রাথমিক সদস্য পদে অন্তত তিন বছর থাকতে হবে দলের প্রার্থী হতে হলে৷ তৃণমূল থেকে এক দুই বছর থেকে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। নারী প্রার্থী ৫০ জন ১০০ জন যাই করেন সেটা সরাসরি নির্বাচন করেন। সংরক্ষিত আসনে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। তবে এটা করবেন কি না সেটা আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। অনেক জায়গায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কাজেই দায় দায়িত্ব এখন থেকেই শুরু৷ অনেক রক্ত ঝরেছে। ৫থেকে ৭শ মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে৷ তারা বলেছে কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আমরা যদি ঠিক করতে না পারি তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ইসি সাংবিধানিকভাবে সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত কার্যকর না করলে তা সংবিধানের লঙ্ঘন। সরকার প্রশাসন সবাই দায়িত্ব পালন না করলে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা দরকার। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে জনগণকে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অসাংবিধানিকভাবে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি দায়িত্বশীল না হয়, অর্থ পেশী শক্তি ব্যবহার করে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজকে ‘ওয়াচডগ’ হয়ে সোচ্চার থাকতে হবে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্যে। সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক ঐক্যমত অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ।
দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।