দিন যত গড়াচ্ছে অকার্যকর হয়ে উঠছে পুলিশ। প্রথম আঘাতটা এসেছিলো গণঅভ্যুত্থানের পর, মানুষের চোখের বিষে পরিণত হয়েছিলো বাহিনীটি। একটি পুরো বাহিনীর ওভাবে পালিয়ে যাওয়া এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ।
সময় গড়ানোর সঙ্গে পুলিশ মাঠে ফিরলেও ফেরেনি চেইন অব কমান্ড। বোঝার ওপর শাকের আঁটি ব্যাপক রদবদল। একজন কর্মকর্তা দির্ঘদিন মাঠে থেকে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এতে তার কাজে গতি আসে, দক্ষতা বাড়ে। কিন্তু বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে মাঠপর্যায়ে রদবদলের ফলে সেই নিয়ন্ত্রণ আর নেই বাহিনীটির সদস্যদের।
রাজধানীর ৯০ শতাংশ সদস্যই ঢাকায় নতুন। তারা চেনেন না মহানগরীর অলিগলি। জানা নেই অপরাধীদের আস্থানের ঠিকানা, ক্ষমতাকাঠামো, দূর্বলতার কথা। কে ছিচকে চোর আর কে গডফাদার তাও জানা নেই। এর পুরো সুযোগ নিচ্ছে ঝানু সন্ত্রাসীরা।
দেখুন: ‘সেই দানব পুলিশ এখন অসহায় পুলিশ হয়ে গেছে’
আবার রাজনীতির ক্ষমতাকাঠামো বদলের সঙ্গে সঙ্গে উত্থান ঘটছে নতুন সন্ত্রাসীদের। এছাড়া বের হয়ে আসছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। তারা গঠন করছে বাহিনী। তাঁদের সাথে টেক্কা দিয়ে পারছে না এমন নতুন নিয়োগ পাওয়া সদস্যরা।
প্রায় একই চিত্র ট্রাফিক ব্যবস্থাতেও। বেশিরভাগ সদস্যেরই রাজধানীতে এর আগে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় যান চালচল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কারণে রাজধানীর সড়কে এখনো ফেরেনি শৃঙ্খলা।
এছাড়া অপরাধ দমনে পুলিশের সবচে বড় উৎস তাঁদের সোর্সেরা। তাঁদের কাছ থেকে আগাম তথ্য নিয়েই সঙ্ঘটিত হবার আগেই দমন করা যায় অপরাধ। আবার অপরাধ ঘটার পর তাঁদের সূত্র থেকেই মেলে অভিযুক্তের খোঁজ। সেই সোর্স ব্যাবস্থাও ভেঙে পড়েছে মাঠের কর্মকর্তারা না থাকায়। অনেক সোর্স গেছেন পালিয়ে। এমনকি তাদেরও নানা অপরাধে যুক্ত হয়ে ওঠার ঘটনা বিরল নয়।
কাজে বাধা দিচ্ছে পুলিশের ভেতরে থাকা স্বৈরাচারের দোসর
আরও আছে অভ্যন্তরীণ দাবি-দাওয়া ও পদোন্নতি নিয়ে বাহিনীর ভেতরে এখনো রয়েছে অস্থিরতা। তাই নতুন নিয়োগ পাওয়া অনেক পুলিস সদস্য উদ্যম হারিয়েছে। কাজ করছেন না তারা। আর গেল সরকারের সমর্থকদের ভূত তো আছেই। সরকার পতনের তিন মাসের মাথায় এসে এখনো পুরোদমে ফিরতে পারেনি পুলিশ বাহিনী।
এমন অবস্থায় দ্রুতই পুলিশ বাহিনী ঘুরে দাড়াতে না পারলে অপরাধ আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
ডিএমপির এক তথ্য বলছে, আগস্টে ডিএমপিতে ১১৯টি হত্যা মামলা হয়েছে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এমন মামলা ২০৬টি। অথচ এর আগের তিন মাসে মে, জুন ও জুলাই ৮৮টি হত্যা মামলা হয়েছে।
ডিএমপির আরেক তথ্য বলছে, অক্টোবর মাসে রাজধানীতে ২১টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। আর সেপ্টেম্বরে ১৪টি । চলতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ডাকাতির মামলা হয়েছে ১৪টি। এর আগের তিন মাস মে, জুন ও জুলাই ৮টি মামলা হয়।
অর্থাৎ সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়তে থাকছে অপরাধ প্রবণতা। তাই সময়ের সাথে সাথে পুলিশ হয়ে উঠবে আরো উদ্যমী এমনটা মত বিশেষজ্ঞদের । তবে তার আগে কাটিয়ে উঠতে হবে পুলিশের সোর্স সংকট ।