৫ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিণতি এমনি হবে, ৪ ঠা আগস্ট্ও ধারণা করেনি কেউ। তবে, পতন যখনই হোক, কেন্দ্রীয় নেতাদের খামখেয়ালীপনা আর মন্ত্রীদের খাই খাই চরিত্রের কারণে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা ছিলো।
এবার যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পতন হলো তাতে অনেকেই মনে করছিলেন, স্বৈরাচারী কায়দায় পরিচালনার জন্য সহসাই রাজপথে দেখা যাবে না দলটির কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরই। কিন্তু ব্যাতিক্রম ছিলো শেখ হাসিনার বাড়ি টুঙ্গিপাড়া।
দলীয় সভানেত্রী দেশ ত্যাগের প্রায় মাস খানেক পর প্রথম ফেসবুকে কোন বিবৃতি দেয়। ধীরে ধীরে সচল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন হ্যান্ডেল।
সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিনে তৃণমুল নেতাকর্মীরা ইনডোর প্রোগ্রাম করেছে, কেক কেটে সভাপতির জন্মদিন উদযাপন করেছে। তবে রাজধানী ঢাকা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোতে রাজপথে নামার সাহস দেখায়নি।
সম্প্রতি সেই ভয় যেন কাটতে শুরু করেছে দলটির নেতাকর্মীদের। প্রায় তিন মাস নিষ্ক্রিয় থাকার পর ফের রাজপথে উঁকিঝুঁকি মারছে আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বাইরেও পেশাজীবীদের সংগঠনগুলোর মধ্যে সাহস সঞ্চার করছে। যার শুরুটা শোনা যায় চট্টগ্রামে সপ্তাহ খানেক আগে ছাত্রলীগের মিছিল দিয়ে।
তবে হাইকোর্টে বঙ্গবন্ধু পরিষদ আইনজীবীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল আলোচনার জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দায় যে দলের সভাপতির ঘাড়ে তাতে করে এতো দ্রুত দলটির কর্মী সমর্থকরা প্রকাশ্যে স্লোগান মিছিল করার শক্তি পায় কোথা থেকে।
অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় এক্সপার্টেজের জায়গা হচ্ছে অ্যাজিটেশন বা বিরোধী দলের ভুমিকায় রাজপথের বিক্ষোভ যা দলটির আঁতুরঘরের দীক্ষা।
প্রকাশ্যে মিছিল মিটিংয়ের ধারাবাহিকতায় ২১ অক্টোবর সকালে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে প্রথমবারের মতো দলটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। যা অনেকটা নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াত শিবিরের বিক্ষোভ কর্মসুচি পালনের মতো। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্রনেতারা দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামল প্রত্যাহারের দাবী জানান। না করলে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে। এরপর দ্রুত সটকে পড়েন তারা।
দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিচ্ছিন্ন এসব কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে যে প্রশ্নটি সামনে আসছে, তাহলো যে রাজপথে আওয়ামী লীগের নবজাগরণ কি শুরু হয়েছে ?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগ ঘুরে দাড়াতে সময় নিয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। জাগরণের যে আলো দেখা যাচ্ছে তাতে অভ্যন্তরীণ আচারে পরিবর্তন আনলে হয়তো শিগগিরিই ঘুরে দাড়াবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলটি।