উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে আবারও নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গেল দুই মাসের ব্যবধানে তিনবার সুদহার বাড়ানো হলেও এর সুফল পাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
আজ (২২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মাহমুদ সালাউদ্দিন নাসের স্বাক্ষরিত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ওভারনাইট রেপো নীতি সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া, ব্যাংকসমূহের তারল্য ব্যবস্থাপনা অধিকতর দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার লক্ষ্যে, নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ১১ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১.৫০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
এদিকে ঘন ঘন সুদহার বাড়ানোর সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মো. আয়নুল ইসলাম নাগরিককে জানান, দেশের মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল অস্ত্র হচ্ছে সুদহার বাড়ানো। কিন্তু এটিই একমাত্র সমাধান নয়। এই পর্যন্ত দুই মাসে ৩ বার সুদহার বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এর সুফল তেমনটা পাওয়া যায়নি। বরং সমস্যা আরও বেশি হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘন ঘন সুদহার বাড়ানো হলে দেশে বিনিয়োগ ব্যবস্থা ভালো হবে না। কস্ট অব ফান্ডের রেট বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থানের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
এ সমস্যা থেকে বের হতে, বাজার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। টিসিবির সক্রিয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি এলসি জটিলতা দূর হলে মূল্যস্ফীতির সমস্যা অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। উল্লেখ্য, ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদেরহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। রেপো রেট বৃদ্ধি করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলোর অর্থ নেওয়ার খরচ বাড়বে। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদের হার বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদের হারও বেড়ে যাবে।