19 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনের অফিস চানক্যপুরীতে। এখানেই একের পর এক বিদেশি দূতাবাস আছে। সেই চানক্যপুরীতেই বিক্ষোভ দেখালেন হাজার দেড়েক মানুষ। তবে তাদের বাংলাদেশের হাই কমিশনের অফিসের কাছে যেতে দেয়া হয়নি। চানক্যপুরী থানার কাছে ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস, তার কাছে একটা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশন কিছুটা দূরে। তার সামনে এখন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল আছে।

উদ্য়োক্তাদের তরফে বলা হয়েছিল, দিল্লির সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজের মানুষদের সঙ্গে ২০০টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে এই আয়োজন।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ মিছিল শুরু হয়। অল্প কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে সেই মিছিল শেষ হয় চানক্যপুরী থানার কাছের রাস্তার উপর। সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ।  সেই মঞ্চের সামনে এসে থামলো মিছিল। যদিও উদ্যোক্তারা কোনো সংগঠনের নাম দেননি, তবে মঞ্চ থেকে ওঠা স্লোগান, বক্তাদের পরিচয় থেকে বোঝা যাচ্ছিল, এই সংগঠনগুলির অধিকাংশই সংঘ পরিবার ও বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত বা তাদের অনুসারী সংগঠন।

অনেক বিক্ষোভকারীর হাতেই ছিল বাংলায় লেখা প্ল্যাকার্ড।

বিক্ষোভের ব্যাপকতা

দিল্লিতে প্রতিবাদ ও সমাবেশে সাধারণত খুব বেশি মানুষ থাকেন না। মঙ্গলবার কাজের দিনের দুপুর বেলা হিসেবে হাজার দেড়েক মানুষের জমায়েতকে দিল্লির জন্য বেশ ভালো ভিড়ই বলা যায়।

অনেকের হাতেই ছিল একটা করে প্ল্যাকার্ড। তাতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতার অভিযোগের প্রতিবাদে নানা ধরনের স্লোগান লেখা ছিল। মূলত তিনটি ভাষায় স্লোগান লেখা হয়েছে- ইংরেজি, হিন্দি ও বাংলা।

তবে বিক্ষোভ থেকে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে নজর রেখেছিল প্রশাসন৷ মোতায়েন করা হয়েছিল দুই ধরনের পুলিশ। দিল্লি পুলিশের পাশাপাশি দাঙ্গারোধী পুলিশ সদস্যদেরও দেখা গেছে সেখানে। 

তবে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণই ছিল। সংগঠকরা যে সময় দিয়েছিলেন, ঘড়ি ধরে প্রায়  সেই সময়ের মধ্যেই শেষ করা হয়েছে বিক্ষোভ। দেড় ঘণ্টার মধ্যে মিছিল ও ভাষণ শেষ হয়ে যায়। তারপর সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে চলে যেতে বলা হয়।  বাসে চড়ে এসেছিলেন অনেক বিক্ষোভকারী, তারাও বিক্ষোভশেষে আর অপেক্ষা করেননি।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে রুদ্রনীল ঘোষ ভাষণ দিচ্ছেন।

বিক্ষোভ সমাবেশের বক্তব্য

বাংলায় ভাষণ দিলেন দুই জন। কলকাতা হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি এবং বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিজেপির সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেতা ও টলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ”অবিলম্বে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ হোক।”  তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করছে। বেশিরভাগ মানুষ ‘মৌলবাদের’ সঙ্গে আছেন এমন কথা তিনি বিশ্বাস করেন না। আর ভারত যেমন বাংলাদেশের বন্ধু, বাংলাদেশও তেমনি ভারতের বন্ধু। তিনি চান, এই বন্ধুত্ব বজায় থাকুক এবং সহিংসতা বন্ধ হোক। 

রুদ্রনীলের বক্তব্য, ”এটা ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের ৩০ হাজার সেনা প্রাণ দিয়েছেন।” তার দাবি, ”ভারত না থাকলে বাংলাদেশের নামও থাকতো না।” 

প্রত্যেক বক্তার জন্য বরাদ্দ ছিল তিন মিনিট। বক্তাদের মধ্যে সাবেক পুলিশ অফিসার, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অধ্যাপক, জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক-সহ অনেকেই ছিলেন। আর ছিলেন সাধ্বী ঋতম্ভরা। বক্তাদের মধ্যে সাধ্বী ঋতম্ভরার ভাষণ ছিল সবচেয়ে ‘কঠোর’। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা বরদাস্ত করা হবে না।” 

বক্তাদের অনেকেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সোমবারই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে গিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের কথা তুলেছেন। ভারত সরকার নিজেদের কথা বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে, এবার তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।

দুপুর পৌনে একটা নাগাদ শেষ হয় বিক্ষোভ। হাতের প্ল্যাকার্ডগুলে রাস্তার পাশের সুসজ্জিত পাতাবাহারের গাছের উপর ফেলে দিয়ে ফিরে যেতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা।

দেখুন: ‘ইইউ ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে নেয়ার অনুরোধ’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন