ভারতের উত্তর প্রদেশের মিরাটে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা জায়গায় নামাজ পড়ার অভিযোগে এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার (১৬ মার্চ) এই খবর নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। ঘটনার সূত্রপাত হয়, সম্প্রতি হোলি উদযাপনের সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক দল ছাত্র খোলা জায়গায় নামাজ পড়ছিল। সেই সময় একটি ভিডিও ধারণ করা হয় এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর প্রতিবাদের মুখে ওই ছাত্র, খালিদ প্রধান (খালিদ মেওয়াতি) কে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনা নিয়ে তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালায়
এবং খালিদ প্রধান ও তিনজন নিরাপত্তা কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে পুলিশ এবং প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভিডিওটি আপলোডকারী খালিদ প্রধানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশের সার্কেল অফিসার শিব প্রতাপ সিং জানিয়েছেন, “আইআইএমটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নামাজ পড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর আমরা খালিদ প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছি এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।” গঙ্গানগর থানার এসএইচও অনুপ সিং জানান, এই ঘটনায় কার্তিক হিন্দু নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেছেন, যার ভিত্তিতে মামলা দাখিল করা হয়েছে। মামলায় ভারতীয় ন্যয় সংহিতা (BNS) ধারা ২৯৯ এবং তথ্য প্রযুক্তি (সংশোধন) আইন, ২০০৮-এর প্রাসঙ্গিক বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, এই ভিডিওর মাধ্যমে নামাজ পড়া ঘটনাটি “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ব্যাহত করার” উদ্দেশ্যে আপলোড করা হয়েছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিবাদের সৃষ্টি করে।
এই ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ঘটনার তদন্ত চালানোর পাশাপাশি, শিগগিরই এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।
হোলির দিন ভারতীয় বিভিন্ন এলাকায় জুমার নামাজের সময় পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল, আর কোথাও কোথাও মসজিদগুলি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। এর ফলে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমঝোতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে এই ঘটনা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটানোর ফলে।
এদিকে, এ ঘটনার পর, স্থানীয় হিন্দু গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে এবং তারা উসকানিমূলক কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছে। ঘটনাটি ইস্যু হয়ে উঠেছে এবং স্থানীয় প্রশাসন শিগগিরই তার তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
এছাড়া, মিরাটসহ উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন অংশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশও এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
পড়ুন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবীর আবাসিক কক্ষ থেকে বহিরাগত পুরুষ আটক
দেখুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নে ‘শয়তান দেহ পাবি, মন পাবি না’ |
ইম/