পুলিশের কেনাকাটায় কমিশন বাণিজ্য-সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের কালো টাকার বড় উৎস। কমিশন বাণিজ্য করতে গড়ে তোলেন একটি সহযোগী চক্র। যুক্ত করেন পুলিশের লজিস্টিকস শাখার কর্মকর্তাদের ও বাহিনীর বাইরের দুজন সহযোগীকে। পছন্দের সরবরাহকারীকে কাজ দিতে ভাঙেন টেন্ডারের শর্ত। জালিয়াতি করে এশিয়াটিক গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানকে পুলিশের ইউনিফর্মের কাপড় ও বিছানার চাদর সরবরাহ করার টেন্ডার দেন সাবেক পুলিশ প্রধান। বেনজীরের মেয়াদকালে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে কেনাকাটা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
পুলিশের সাবেক আইজি-বেনজীর আহমেদ বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক। শত শত বিঘা জমি কিনেছেন জোরপূর্বক, গড়ে তুলেছেন রিসোর্ট, যা এখন দেশজুড়ে আলোচিত। বেনজীর এতো অর্থ বিত্ত বানালেন কিভাবে?
সূত্রগুলো বলছে, পুলিশের কেনাকাটাকে তিনি ব্যবহার করেন কালোটাকার উৎস হিসেবে। এজন্য তিনি সানজানা ফেব্রিকস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে জালিয়াতি করে পুলিশের পোশাকের কাপড় সরবরাহ করার সুযোগ দেন। টেন্ডারের শর্ত অমান্য করে, প্রতিষ্ঠানটি বেনজীরের মেয়াদকালে টানা ইউনিফর্মের কাপড় সরবরাহ করার চু্ক্তি বাগিয়ে নেয়।
ইউনিফর্মের জন্য বছরে প্রায় ২৮ লাখ মিটার কাপড় দরকার হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ১১২ কোটি টাকা। তাছাড়া, বিছানার চাদর সরবরাহের ঠিকাদারিও পায় সানজানার মালিকের প্রতিষ্ঠান। বছরে এসব কেনাকাটায় পুলিশের ব্যয় ৫শ কোটি টাকার ওপরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল পুলিশ নয়, সরকারি খাতে কেনাকাটায় দুর্নীতি, কালো টাকার বড় উৎস।
দরপত্রের শর্তের অন্তত ৫টি অমান্য করে কাজ নেয় সানজানা ফেব্রিকস। শর্ত ছিলো প্রিমা কিংবা সুপ্রিমা তুলায় নিজস্ব কারখানায় সুতা বানানোর। উল্টো ভারত থেকে নিম্নমানের সুতা আমদানি করে তৈরি করা হয় কাপড়। কেবল তাই নয়, নির্ধারিত সময়ে কাপড় কিংবা চাদর দিতে ব্যর্থ হলেও কাটা হয়নি জরিমানা।
অভিযোগ আছে, এই টেন্ডারচক্রে বেনজীর সহায়তা নিয়েছেন পুলিশের কেনাকাটার দায়িত্বে ন্যস্থ লজিস্টিকস শাখার দুই/একজন কর্মকর্তার। তবে, তারা কারসাজির কথা অস্বীকার করেছেন।
কেবল যে পুলিশেই তার সহযোগী ছিলো, তা নয়, বেনজীর কালো টাকা নিরাপদে সংগ্রহ, বিনিয়োগ, সম্পদ গড়ে তুলতে বাহিনীর বাইরে দুজনকে সম্পৃক্ত করেন। যাদের একজনের নাম জুবায়ের, আরেকজন কাইয়ুম। নাগরিক কথা বলে কাইযুমের সঙ্গে।
বেনজীরের সময়কালে, অন্তত এক হাজার কোটি টাকার দরপত্র বাগিয়ে নিয়েছে সানজানা ফেব্রিকস। আর কোম্পানিটি ৩০ কোটি টাকা খরচ করে, দরপত্র পেতে, যা বেনজীর ও লজিস্টিক শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রগুলো বলছে, সানজানা ফেব্রিকস বেনজীরের কমিশনের টাকা কখনো দেশে, কখনো বিদেশে তার লোকজনের কাছে পৌছে দিতো, এজন্য বাড্ডায় একটি অফিসও খোলা হয়, যা বেনজীরের অফিসে হিসাবেই পরিচিত।
সানজানা ফেব্রিকসের মূল কোম্পানী এশিয়াটিক গ্রুপ। গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান এইচ এইচ টেক্সটাইলও পুলিশের পণ্য সরবরাহ করে আসছে। লজিস্টিক শাখাকে ম্যানেজ করে এখনো কোম্পানীটি পুলিশের পণ্য সরবরাহ করে আসছে। অথচ, জালিয়াতি করায় ২০১৫ সালে এশিয়ান গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকায় ফেলে পুলিশ সদরদপ্তর।
এসব বিষয়ে এশিয়াটিক গ্রুপের দিলকুশা কার্যালয়ে গেলেও তারা কথা বলেনি।