নীলফামারীর সৈয়দপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিউটি সাইকেল স্টোরের মালিক আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। পূজা উদযাপন ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,
সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমিত কুমার আগারওয়ালা নিক্কি এই অভিযোগ করেছেন।
আজ শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১ টায় শহীদ তুলশীরাম সড়কস্থ নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে উপরোক্ত অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন তার মা উমা দেবী আগারওয়ালা, ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালা রিক্কি, সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গফুর সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার প্রামাণিক ও এম এ পারভেজ লিটন, সৈয়দপুর পৌর সভাপতি শেখ বাবলুসহ বিএনপি’র বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
সুমিত কুমার আগারওয়ালা নিক্কি বলেন, গত ৮ মার্চ সৈয়দপুর শহরের ভূমিখেকো, রেলের সম্পত্তি আত্মসাৎকারী আলতাফ হোসেন শহরের ইসলামী ব্যাংকের বিপরীতে আমাদের যে বাড়িটি দখল করতে গিয়েছিল তা অত্যন্ত ঐতিহাসিক বাড়ি। সৈয়দপুরে আমাদের পরিবারের গোড়াপত্তন স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে। ওই বাড়িতেই আমার দাদা, বাবা ও আমাদের জন্ম এবং বসবাস।
তিনি বলেন, তাছাড়া আগারওয়ালা পরিবারের একমাত্র আমরাই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বাবা বেঁচে থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের এই বাড়িতে এসেছেন। সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া সবসময়ই আসা যাওয়া করতেন। পৈত্রিক এই বাড়িসহ গুদামঘর দখলে নিতে আলতাফ হোসেন নিজেকে ভাড়াটিয়া সাজিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরী করে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ প্রায় শতাধিক গুন্ডা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমার ছেলে রাঘব আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
বিএনপি করলেও রাজনৈতিক প্রভাব না খাটিয়ে হিন্দু কল্যাণ সমিতির লোকজনকে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। অথচ সমিতির সভাপতি এ্যাড. তুষার কান্তি রায় সকলের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে আলতাফের কাছে অবৈধ সুবিধা নিয়ে সংগঠনের প্যাডে মিথ্যে বিবৃতি দেন। যার উদ্ধৃতি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার আলতাফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার পায়তারা করার অভিযোগ তুলেছে। এক্ষেত্রে সৈয়দপুর ব্যবসায়ী সমিতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
নিক্কি আরও বলেন, আলতাফ দাবী করেছেন বাড়িটি তিনি চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ভাড়া নিয়েছেন আমার কাকা প্রদীপ কুমার আগারওয়ালার কথিত পাওয়ায় অব এটর্নি প্রাপ্ত জনৈক হিল্লোল রায়ের কাছে। অথচ প্রদীপ কুমার তার প্রাপ্যতার চেয়ে অনেক বেশি সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে সপরিবারে ভারতে চলে গেছেন এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই বসবাস করছেন। তিনি কিভাবে বাংলাদেশে কাউকে পাওয়ায় অব এটর্নি দিয়েছেন।
এলাকাবাসী আজগার আলী বলেন, সেদিন আলতাফ হোসেন লাঠি-সোটা, দা-ছোড়া সহ শতাধিক লোকজন নিয়ে এসে সুমিত ও তার ছেলের উপর হামলা চালায়। এতে সুমিতের ছেলেসহ সবাই আহত হয়।
নিক্কির ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালা রিক্কি বলেন, আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি হওয়ায় এবং প্রদীপ কুমার তার ভাগের চেয়ে বেশি সম্পত্তি বিক্রি করায় এনিয়ে বাটোয়ারা মামলা চলমান। তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিক্রি বা পাওয়ার অব এটর্নি দিতে পারেন কি? তাছাড়া আলতাফ হোসেন কথিত ভাড়াটিয়া হয়ে কেন এই সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা করছেন? তৃতীয় পক্ষের এমন মাতাব্বরি কেন?
তিনি বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি। আমাদের দাবী বা কাগজপত্র ঠিক থাকলে হয় আমরা পাবো নয়তো কাকা প্রদীপ কুমার পাবেন। এখানে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে ভূমিদস্যু আলতাফ কেন হামলা করে উল্টা মিথ্যে হয়রানীমুলক মামলা দিয়েছে। এর বিচার চাই। আমাদের পক্ষে নয়, ন্যায়ের পক্ষে থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গফুর সরকার বলেন, আমরা নিক্কি ও আলতাফের মধ্যে শান্তিপূর্ণ মিমাংসা চাই। এজন্য আমার কাছে প্রস্তাব এসেছে উভয়পক্ষের কাগজ দেখে সে অনুযায়ী একটা সমাধান করার। এর প্রেক্ষিতে নিক্কি বলেন, আমরা আলতাফ বা তৃতীয় কোন ব্যক্তির সাথে বসতে রাজি না। যার সাথে বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ সেই প্রদীপ কুমার আগারওয়ালা আসলে তার সাথে বসতে চাই। নয়তো আদালতের রায়েই চুড়ান্ত হবে।
এনএ/