যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ কে টেক্কা দিতে নতুন যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি চীন। পঞ্চম প্রজন্মের এই স্টিলথ যুদ্ধবিমানের নাম জে-৩৫।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) পঞ্চদশ চায়না ইন্টারন্যাশনাল অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশনে এ যুদ্ধবিমান প্রথমবারের মতো হাজির করা হয়। চীনা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম চায়না ডেইলির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল চীনের গুয়াংডং প্রদেশে পঞ্চদশ চীন আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ও মহাকাশ প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়। সে অনুষ্ঠানে অল্প সময়ের জন্য আকাশে উড়েছিল জে-৩৫। চীনের এই প্রদর্শনী চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত।
পঞ্চদশ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ও মহাকাশ প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর রাডার উপেক্ষাকারী জেটটি অল্প সময়ের জন্য আকাশে উড়েছিল। দেশটির গুয়াংডং প্রদেশের ঝুহাইতে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ গত সপ্তাহে প্রথমবার এই যুদ্ধবিমানকে নিজেদের বহরে যুক্ত করেছে।
এরপর প্রথমবারের মতো রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম এই যুদ্ধবিমান জনসমক্ষে আনা হয়েছে। চীনের নতুন এই যুদ্ধবিমান পশ্চিমাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীনের তৈরি যুদ্ধবিমানে নকশা নকল
এর আগেও চীন মার্কিন এফ-২২ র্যাপটরের নকশা অনুকরণ করে তৈরি করেছিল জে-২০। তফাত শুধু জে-২০–এর সামনের দিকে একটি তীক্ষ্ণ বাড়তি অংশ আছে, যা এফ-২২ তে নেই। এছাড়াও মার্কিন এফ-১৬ এর সাথে সাদৃশ্য রেখে চীন তৈরি করেছিল চেংডু জে-১০, যা ‘ভিগোরাস ড্রাগন’ নামেও পরিচিত।
চীনের নতুন যুদ্ধবিমান জে-৩৫ দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন কোম্পানির তৈরি এফ-৩৫–এর মতোই। পার্থক্য শুধু, জে-৩৫-এ দুটি ইঞ্জিন আছে এবং এফ-৩৫-এ আছে একটি ইঞ্জিন। চীন অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিভিন্ন যুদ্ধবিমানের নকশা অনুকরণ করার জন্য সুপরিচিত।
চীনের জে-২০ এবং মার্কিন এফ-২২ র্যাপটরের নকশা একই রকম। পার্থক্য শুধু জে-২০-এর সামনের দিকে একটি তীক্ষ্ণ বাড়তি অংশ রয়েছে, যা এফ-২২ তে নেই।
বেজিংয়ের এই নতুন হাতিয়ার নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) চাঞ্চল্যকর পোস্ট করেছেন পিএলএ গবেষক রিক জো। তাঁর কথায়, ‘‘ড্রাগন সেনা অস্ত্রটি সম্পর্কে যা যা দাবি করেছে, তার সবটা সত্যি হলে, এটি কৌশলগত দিক থেকে চিনকে অনেকটা এগিয়ে দেবে। তবে এর সঙ্গে আমেরিকার থাড বা রাশিয়ার ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’-এর মতো অতিশক্তিশালী বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তুলনা টানা যায় কি না, তা স্পষ্ট নয়।’’
গ্লোবাল টাইমস সূত্রে খবর, ২০২১ সালে প্রথম বার এইচকিউ ১৯ অ্যান্টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রর পরীক্ষা করে চিন। ২০২০-’২১ আর্থিক বছরে প্রকাশিত আমেরিকার প্রতিরক্ষা মূল্যায়ণ দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই এই হাতিয়ার ব্যবহার করছে পিএলএ। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে বেজিংয়ের তরফে কিছু বলা হয়নি।
সমর বিশেষজ্ঞদের কথায়, বায়ুমণ্ডলের বাইরের দিক থেকে ধেয়ে আসা ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করে তা মাঝ আকাশেই ধ্বংস করতে পারে এইচকিউ-১৯। এতে রয়েছে উন্নত রাডার। আমেরিকার থাড বা রাশিয়ার এস ৪০০-র মতোই এতে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এটির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সেখানে পাওয়া যায়নি।
পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, নতুন এই বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটির মাধ্যমে হাজার থেকে তিন হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে পারবে ড্রাগন সেনা। এতে সম্ভবত ‘হিট টু কিল’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা আমেরিকান থাডে রয়েছে।
কী এই হিট টু কিল প্রযুক্তি? বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এতে শত্রুর ছোড়া ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করা গেলে এইচকিউ-১৯ থেকে উড়ে যাবে একটি ক্ষেপণাস্ত্র। যা ওই আগত ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটাবে এবং তাকে ধ্বংস করবে। এই প্রযুক্তিতে নির্ভুল ভাবে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা সম্ভব। যা এর কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০০৮ সালে আমেরিকান সেনাবাহিনীর হাতে আসে থাড। এর নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘লকহিড মার্টিন মিসাইলস্ অ্যান্ড ফায়ার কন্ট্রোল’। স্বল্প, মাঝারি এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করে তা মাঝ আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে থাডের। যা নকল করে এইচকিউ-১৯ বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেজিং তৈরি করেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
চলতি বছরের অক্টোবরে হামাস-হিজ়বুল্লা-হুথি এবং ইরানের রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ইজ়রায়েলের হাতে থাড তুলে দেয় ওয়াশিংটন। এটি পরিচালনার জন্য ইহুদি ভূমিতে সৈনিকও পাঠিয়েছেন তারা। থাড চলে আসার পর নতুন করে ইজ়রায়েলে বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর সাহস পায়নি তেহরান।
বর্তমানে রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে পিএলএ। এর ৪০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে ছোট-বড় যে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। এস ৪০০-এ রয়েছে ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র (সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল বা এসএএম)। যার সঙ্গে এইচকিউ ১৯-এর ক্ষেপণাস্ত্রগুলির যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
দেখুন: ইউক্রেন যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র্বের দেওয়া এফ-১৬ বিমান, অসহায় রুশ সেনারা!