ভারতের দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নিম্নকক্ষ লোকসভা। লোকসভার মোট সদস্য ৫৪৩ জন। নিয়মানুযায়ী,লোকসভার সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন যতটুকু না ক্ষমতাসীন দল বিজেপির, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতের ১৪০ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের জন্য।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভারতের উল্লেখযোগ্য সব গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়েছে কংগ্রেস। ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর অধিকাংশ সময়ই ভারতের নেতৃত্বেও ছিলো দলটি। ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের আধিপত্য কমতে শুরু করেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে।
কংগ্রেস নেতা ও ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে কংগ্রেসের দায়িত্ব নেন তার ছেলে রাজিব গান্ধী। এরপর মাত্র ৪০ বছরে প্রধানমন্ত্রী হন রাজিব গান্ধী। ১৯৯১ সালে তাকেও হত্যা করা হয়। রাজিব গান্ধী নিহত হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের সভাপতি হন রাজিব গান্ধীর স্ত্রীর ইটালিয়ান বংশোদ্ভূত সোনিয়া গান্ধী। ২০০৪ সালে কয়েকটি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে তিনি জোট করেন। কংগ্রেস বিজয়ী হলেও প্রধানমন্ত্রী হননি সোনিয়া। প্রধানমন্ত্রী করা হয় ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো ভারতের আইনসভার জনসম্পৃক্ততা কম থাকা উচ্চকক্ষ রাজ্য সভার নির্বাচিত সদস্য মনমোহন সিংককে। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মনমোহনকে বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন ১৯৭৫-৭৬ মেয়াদে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক থাকা পিভি নরসিংহ রাও।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রগতিশীল দলগুলোর ইউনাইটেড প্রগেসিভ অ্যালায়েন্স-ইউপিএ জোটের আসন ছিলো ২০৬। তখন অনেকেই ধারণা করেছিলো- সেবার মনমোহন নয়, রাজিব-সোনিয়ার পুত্র রাহুল গান্ধীই হবেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের জয়ে সোনিয়াকে বাহবা দেওয়া হলেও ২০০৯ সালের কৃতিত্ব পুরোটার দাবিদার নাকি রাহুলেরই। তবে, মনমোহন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ২ মেয়াদে মনমোহনের ১০ বছরের মেয়াদের পর আর ক্ষমতায় আসতে পারেনি কংগ্রেস। এমনকি নির্বাচনে জোরালোভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারেনি দলটি। মনমোহনের ১০ বছরের মেয়াদে নিয়ম না মেনে কয়লার ব্লক রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যে প্রক্রিয়ায় ভারতের আর্থিক ক্ষতি হয় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ ছিলো মনমহনের সময়ে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের আসন নেমে আসে মাত্র ৪২টিতে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে যে আসন বেড়েছে মাত্র ১০টি। ১৬তম লোকসভায় ২৮২ এবং ১৭তম লোকসভায় ৩০৩ আসন পায়ে পরপর দুইবার ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করেছে ১৯৮০ সালে গড়ে ওঠা ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি চলমান নির্বাচনে যেখানে ৪শ আসন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী, সেখানে কংগ্রেস যেন রাজনীতির এক গভীর সমুদ্রে একাকী অসহায় হয়ে পড়ছে দিন দিন। ক্ষমতায় যেতে প্রয়োজনীয় ২৭২ আসন ক্রমেই অসম্ভব এক রাজনৈতিক বাস্তবতা এখন কংগ্রেসের জন্য।
ভারতের মোট ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৪৪ দিন ধরে চলা নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ১৬ কোটি ৬৩ লাখ। ৭ ধাপের ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন।
লেখক: কাজী ইমদাদ, নাগরিক অনলাইন।