26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০২৫

অশান্ত ভারতের নাগপুর, কারফিউ জারি

ভারতের নাগপুর শহরে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করেছে এবং পরে শহরে কারফিউ জারি করেছে। নাগপুরের মহাল এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় এবং তা ধীরে ধীরে শহরের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পাথর ছোড়া, ভাঙচুর এবং গাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এ সংঘর্ষে ছয় বেসামরিক নাগরিক ও তিন পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন। পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে এবং পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

এ সংঘর্ষের পেছনে মূল কারণ ছিল ভারতের মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরানোর দাবিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিবাদ।

তারা বেশ কিছু দিন ধরেই আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। সোমবার, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল মোগল সম্রাটকে অত্যাচারী শাসক হিসেবে চিহ্নিত করে তার কবর সরানোর জন্য বিক্ষোভ শুরু করে। এই বিক্ষোভে কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা একটি প্রতীকী কবর পোড়ায় এবং আওরঙ্গজেবের ছবিতে আগুন দেয়। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং মুসলিম সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট, যানবাহনে হামলা এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এর পর, গুজব ছড়ানো হয় যে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এতে সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি চালায়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের সাতটি গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোমবার রাত থেকে শহরে কারফিউ জারি করা হয় এবং পুলিশ ৫০ জনকে গ্রেফতার করে।

আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবির পেছনে কিছু রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। সম্প্রতি বলিউডের একটি ছবি ‘ছাওয়া’ মুক্তি পায়, যেখানে আওরঙ্গজেবের হাতে সম্ভাজি মহারাজের মৃত্যু বিষয়টি দেখানো হয়। এরপর থেকেই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এই সমাধি সরানোর দাবি তুলতে থাকে। যদিও বিজেপি এবং কংগ্রেস এই দাবির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা বলছে, মুঘল সাম্রাজ্য এখন আর নেই এবং আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর এই দাবির পেছনে কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। তবে এই দাবির কারণে ভারতে আবারও হিন্দু-মুসলিম সহিংসতার সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে।

এ পরিস্থিতি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিমবিরোধী রাজনীতির প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি ইতিহাসের বিকৃতি এবং বিভাজন তৈরির একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করছে অনেক বিশ্লেষক।

পড়ুন: চীনের উত্থানে ভারতের নেতা হওয়ার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে: ভারতীয় সেনাপ্রধান

দেখুন: বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক: কার কাকে বেশি প্রয়োজন?

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন