ফুটবলের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। চলতি বছর কার হাতে উঠছে এই অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছিলই। ব্যালন ডি’অর জয়ের তালিকায় শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিউস জুনিয়র। তারপর থেকেই শুরু হয় নানা জল্পনা। অবশেষে অবসান হলো সব জল্পনার, ২০২৪ ব্যালন ডি’অর জিতলেন ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ ফুটবলার রদ্রি।
এক্ষেত্রে রদ্রি পেছনে ফেলেছেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিনিসিয়ুস জুনিয়রসহ শর্টলিস্টে থাকা ২৯ তারকা ফুটবলারকে। ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর জুরি বোর্ডে স্বাভাবিকভাবে এই স্প্যানিশ তারকাই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন। এরপর ভোটের নিরিখে যথাক্রমে অবস্থান ভিনিসিয়ুস, জ্যুড বেলিংহ্যাম, দানি কারভাহাল, আর্লিং হালান্ড, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও লাউতারো মার্টিনেজের।
প্রেস্টিজিয়াস এই পুরস্কার নিতে এদিন (মঙ্গলবার) ক্রাচে ভর দিয়েই প্যারিসের থিয়েটার দু শাটলেটে প্রবেশ করেন রদ্রি। গত মাসে প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে এসিএল চোট পেয়ে তিনি বর্তমানে মাঠের বাইরে রয়েছেন। এ নিয়ে ৬৪ বছর পর স্পেনের কোনো পুরুষ ফুটবলার হিসেবে ব্যালন জিতলেন রদ্রি।
ওয়াহ সিটিরও সাবেক খেলোয়াড়, তার কাছ থেকে পুরস্কারটি নিতে ভালোই লাগার কথা তার। ক্রাচে ভর দিয়ে মঞ্চের দিকে যাচ্ছিলেন রদ্রি। তখন তাকে বেশ আবেগপ্রবণ মনে হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে রিয়ালের বয়কট-বিতর্ক অনুষ্ঠানের প্রতি মনোযোগ একটু হলেও সরিয়ে দিয়েছিল। তাতে রদ্রির আলোয় এতটুকু আঁধার নামেনি।
স্প্যানিশ ভাষায় তিনি বললেন, ‘আমি, আমার পরিবার ও দেশের জন্য খুব বিশেষ একটি দিন।’ প্রেমিকা লরাকেও ধন্যবাদ জানালেন। এদিন এই জুটির অষ্টম বার্ষিকী। এমন দিনে ব্যালন ডি’অর জয়! তার ভালোবাসার মানুষটার নিশ্চই এটি দারুণ একটি উপহার। উপহার পেলেন স্পেন ও ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকেরাও। ২০০৬ সালে ফাবিও কানাভারোর পর প্রথম ডিফেন্সিভ খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জিতলেন রদ্রি।
সর্বশেষ ১৯৬০ সালে বার্সেলোনার স্প্যানিশ তারকা লুইস সুয়ারেজ আকর্ষণীয় এই পুরস্কার জিতেছিলেন, স্পেনের পুরুষ ফুটবলে সেটাই ছিল এতদিন একমাত্র। এ ছাড়া, ম্যানচেস্টার সিটির তারকা ফুটবলাররা ব্যালনের জন্য মনোনীত হলেও এর আগে কারও ব্যালন পাওয়ার নজির ছিল না। সেদিক থেকেও রদ্রি প্রথম।
রদ্রি গত মৌসুমে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৬৩টি ম্যাচ। যেখানে গোল করেছেন ১২টি ও অ্যাসিস্ট ১৬টি। ওই মৌসুমে তার দখলে গেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, উয়েফা সুপার কাপ ও স্পেনের জার্সিতে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। ক্লাব আর জাতীয় দলে সমান পারফরম্যান্সের বিচারেই ব্যালন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন রদ্রি।
এবারের ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করছেন আফ্রিকান কিংবদন্তি ও আইভরিকোস্টের সাবেক তারকা দিদিয়ের দ্রগবা এবং ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপে’র সংবাদকর্মী স্যান্ডি হেরিবার্ট। আর আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল তার ব্যালন জয়ের গুঞ্জন, ছিল কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা। যদিও এবার রোমাঞ্চ কমিয়ে দিয়েছে রদ্রির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের অনুপস্থিতি।
ভিনির ব্যালন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকার কথা শোনা যাচ্ছিল মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে। তবে দাবার গুটি উল্টে গেছে জানার পরই পুরো রিয়াল মাদ্রিদ দল এই অনুষ্ঠানকে বয়কট ও প্যারিসের ফ্লাইট বাতিল করে। ফলে তালিকায় থাকা ভিনি, দানি কারভাহাল, কিলিয়ান এমবাপ্পে ও কোচ আনচেলত্তির পা পড়েনি জমকালো এই আয়োজনে।
অথচ পুরুষ ফুটবলের সেরা ক্লাবের পুরস্কারটি পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লস ব্লাঙ্কোসরা গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগসহ শিরোপার ট্রেবল জিতেছে। এ ছাড়া পুরুষ ফুটবলের সেরা কোচের ট্রফি গেছে রিয়াল বস আনচেলত্তির দখলে। সর্বোচ্চ ৫২ গোলের জন্য গার্ড মুলার ট্রফি জিতেছেন গত মৌসুমে পিএসজিতে খেলা এমবাপে। সমান গোলের জন্য যৌথভাবে এই পুরস্কার জেতেন হ্যারি কেইনও।
গত দুই দশক রাজত্বের পর এবার প্রথমবারের মতো ব্যালন ডি’অরের তালিকায় ছিলেন না দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মহাতারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ১৯৫৬ সাল থেকে ফ্রান্স ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে দেওয়া ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই পুরস্কারে তাদের মতো এমন লম্বা সময় ধরে দাপট ছিল না কারও। সেই অধ্যায় পেরিয়ে এবার সম্পূর্ণ নতুন তারকা-যুগের সূচনা ঘটেছে!