রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কেন কঠোর অবস্থানে ফ্রান্স- সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। ২০১৭ সালে প্রথম এবং ২০২২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইমানুয়েল ম্যাকরণ। ফ্রান্সে টানা দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড কম।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের পক্ষে শুরু থেকে অবস্থান নিয়ে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা করে আসছে। সম্প্রতি ম্যাকরণ আরও একধাপ এগিয়ে প্রয়োজনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনে ফরাসি সৈন্য পাঠাতে চেয়েছেন।
যদিও শুরুতে অসম এ যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে। তখন ম্যাকরণের অবস্থান ছিলো; যুদ্ধে মস্কো যেন অপদস্ত না হয়, ইউরোপের অংশ রাশিয়ার নিরাপত্তা যেন হুমকিতে না পড়ে। ২০২৩ সাল থেকে নীতিগত পরিবর্তনের কারণে ম্যাকরণের এ পদক্ষেপগুলো বিবেচিত হচ্ছে আগ্রাসী বৈদেশিক নীতি হিসেবে।
ফেব্রুয়ারিতেও ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে একটি সম্মেলনে দেশটির নেতা বলেছেন; ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পশ্চিমা সৈন্যদের অবস্থানের সম্ভাবনার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ম্যাকরণের এ অবস্থানে চটেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রধান মিত্র দেশগুলো যদিও ফ্রান্সের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।
৫ মার্চ চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ম্যাকরণ জানান, রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে ইউরোপ কাপুরুষতার পরিচয় দিতে পারে না। ম্যাকরণের এ অবস্থানের পেছনে যে কারণ থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে তা হচ্ছে; যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন বড় ধরনের সংকটে পড়েছে এবং ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বিলম্বিত হতে শুরু করেছে।
ইউক্রেনের নীতি যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকা হলেও প্রায় তিনগুণ বেশি জনসংখ্যা থাকা রাশিয়ার সঙ্গে শক্তিতে পেরে উঠছে না। প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে রসদ সংকটও মোকাবিলা করতে হচ্ছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে। ইউক্রেনের এই অবস্থানের সুযোগ পাচ্ছে রাশিয়া।
ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে সাইবার হামলাসহ নানা ধরনের রুশ হামলা বেড়েছে। ম্যাকরণ চান: ইউরোপের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি হবে ওয়াশিংটনের প্রভাবমুক্ত এবং কিয়েভকে সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে হবে না ইউরোপের।
মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের অনানুষ্ঠিকভাবে মনোনয়ন নিশ্চিত করা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে দেওয়া একটি বক্তব্য নিয়ে ইউরোপের নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুতিনকে যা খুশি তাই করার জন্য উৎসাহ দেবেন যদি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ব্যয় সংক্রান্ত নির্দিষ্ট নীতি, জিডিপির ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয়, মেনে না চলে।
ম্যাকরণ যে হুশিঁয়ারি দিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে; ইউক্রেন নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। ইউক্রেনের পাশে মূল সহায়ক শক্তি হিসেবে আর থাকছে না যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয়নরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানোর সময় এসেছে। মার্কিনৗদের ওপর এ নির্ভরতা কখনোই অনিদিষ্টকালের জন্য হতে পারে না।
ম্যাকরণও ইউরোপীয়ানদের এই চিন্তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। ম্যাকরণ ফ্রান্সসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে চাইছেন। বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ন্যাটোর পূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলভুক্ত দেশগুলো বিশ্বাস করে, ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর এবং তারও অনেক আগে থেকে ফ্রান্সসহ ন্যাটোর পশ্চিমাঞ্চলের দেশগুলোকে ব্যস্ত রাখা হয়েছে; রাশিয়া কি চায় তা নিয়ে।
এর কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ফ্রান্সসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে অন্যান্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সমর্থন পাবে ফ্রান্স যা দেশটির কৌশলগত সামরিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের প্রতিবেশী ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি ফ্রান্স আগে সঠিকভাবে বুঝতে পারেনি।