মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও বিমান থেকে বোমা হামলা চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তের এপার থেকে গোলা ও মর্টারের বিকট শব্দ শোনা যায় এবং বোমা বিস্ফোরণে এপারের মানুষের বাড়িঘর কেঁপে উঠছে।
এসব ঘটনায় উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ, নোয়াপাড়া, সাবরাং ও পৌরসভা এলাকার মানুষ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ে রয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে এপারের ঘরবাড়ি যেভাবে কেঁপে উঠছে, এর আগে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি বলে জানান মংডুতে থাকা স্থানীয়রা।
শুক্রবার সকালে সাবরাং ইউনিয়নের ৫ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল ফয়েজ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে সারা রাত মংডু থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসতে থাকে। এর আগে সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর ওই এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনা গিয়েছিল।
শাহ পরীর দ্বীপ সীমান্তের বাজার পাড়ার বাসিন্দা আবু তালেব বলেন, রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান যুদ্ধ পুনরায় তুমুল হওয়ায় ভয়াবহ শব্দ ভেসে আসছে। এসব শব্দ মর্টার শেল ও বোমা বিস্ফোরণের হতে পারে। গত রাতে (বৃহস্পতিবার) ঘুমাতেও কষ্ট হয়েছে।
দ্বীপের জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা কালা মিয়া বলেন, “এশা নামাজের সময় বোমার শব্দে থর থর করে কেঁপে উঠে পুরো মসজিদ। এই পর্যন্ত এমন গোলাগুলির শব্দ আর কোনো সময় শোনা যায়নি।”
টেকনাফের মংডুতে থাকা কাতার প্রবাসী ও ইতিহাসবিদ ডক্টর হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসে রাখাইনে গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনছি। বোমা বিস্ফোরণের সময় যেভাবে এপারের মাটি, ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে এবং স্থানীয়দের মুখে শুনলাম তাদের ছোট বাচ্চারা ভয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠছে এবং ভয় পাচ্ছে। এসবের কারণে একটি শিশুর ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী রাষ্ট্র, তাদের দেশে সংঘাত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই বলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠীকে নিয়মিত ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা যাবে না। এ বিষয়ে সরকারের উচিত রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সমর্থিত সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলা এবং এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যে, রাখাইনের চলমান পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশের সীমান্তের মানুষের জানমালের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় এবং কোনো বাংলাদেশিকে আতঙ্কিত হতে না হয়।
মংডুতে যুদ্ধ বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করছে এমন মনে হয়। তবে তারা আমাদের আকাশ সীমানা অতিক্রম করছে কিনা সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
সীমান্তের বাসিন্দা ও রোহিঙ্গাদের অনেক স্বজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রয়েছেন। মাঝে মাঝে তাদের কাছ থেকে যুদ্ধের তথ্য পান এপারের বাসিন্দারা।
সেসব তথ্যের ভিত্তিতেই টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসবাসকারী আবদুল আমিন জানান, নয় মাসের বেশি সময় রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে আরাকান আর্মি। এরমধ্যে আরকান আর্মি মংডু টাউনশিপের আশপাশের দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি)র বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে।
বর্তমানে সেই সীমান্তচৌকিগুলো পুনরায় উদ্ধার করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন দেশটির সেনাবাহিনী ও বিজিপি।