মৌলভীবাজার মণিপুরী সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব রাসলীলা। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়ামন্ডপ প্রাঙ্গনে ১৮২তম রাস উৎসব ও আদমপুরে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায়ের মহারাসোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ণিমা তিথিকে সামনে রেখে মণিপুরি সম্প্র্রদায়ের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব রাত ১২টা থেকে শুরু হয়ে চলে পরদিন ভোর পর্যন্ত।
শুক্রবার রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে শনিবার ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলার হৈ চৈ
মহারাসলীলা তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্যদিয়ে শুক্রবার রাত ১১টা থেকে শুরু হয়ে শনিবার ভোর পর্যন্ত মণিপুরী নৃত্যের ধ্রুপদ ভঙ্গিমায় রাধাকৃষ্ণের রাসনৃত্য চলে। রাতভর রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার নৃত্যগীতাভিনয়ে রাসলীলার তিনটি মন্ডপে তরুণীরাও অংশ নেন।
উৎসবস্থলের উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হয় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসে বিরাট মেলা। রাখাল নৃত্যের বিভিন্ন ধাপে রাধাকৃষ্ণের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠে। নিজস্ব পোশাকে সজ্জিত হয়ে মণিপুরী তরুণ-তরুণীরা এতে অংশ নেন। যা দেখতে হাজারো ভক্তের সমাগম ঘটে।
দর্শনার্থীরা নাগরিককে জানান, মৌলভীবাজার এর বাইরে থেকেও অনেকেই এই দিনে এই উৎসবে চলে আসেন আনন্দ করার জন্য। এই উৎসবে সকালে গোষ্ঠ লীলা হয় এবং রাতে হয় রাসলীলা।
আর মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, মনিপুরী সম্প্রদায়ের মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের এই সংস্কৃতি উপভোগ করার জন্য সমাগম ঘটে। এই উৎসব আমরা সবাই মিলেমিশে উপভোগ করি। এই উৎসবে সম্পৃতির মহা মিলনের সুবাতাস বইতে শুরু করে।
জানা যায়, ১৭৭৯ সালে মণিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্ন দেখে নৃত্যগীতে যে প্রার্থনার শুরু করেছিলেন, সেটাই রাস উৎসব। ভাগ্যচন্দ্রের পরবর্তী রাজাদের বেশির ভাগই ছিলেন নৃত্যগীতে পারদর্শী এবং তারা নিজেরাও রাসনৃত্যে অংশ নিতেন। সেই ধারাবাহিকতায় আজও উদযাপিত হয়ে আসছে মণিপুরী সম্প্রদায়ের রাস উৎসব।
আরও উল্লেখ্য, ভারতের উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া সহ অন্যান্য জায়গায়, শান্তিপুরের মূল উৎসব হলো রাস, যা শান্তিপুরের ভঙ্গারাস নামেই বেশি পরিচিত। ওড়িশা, আসাম ও মণিপুরে রাসযাত্রার উৎসব বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। এই উৎসবের অংশ হিসেবে গোপিনীবৃন্দ সহযোগে রাধা-কৃষ্ণের আরাধনা এবং অঞ্চলভেদে কথথক, ভরতনাট্যম, ওড়িশি, মণিপুরি প্রভৃতি ঘরানার শাস্ত্রীয় ও বিভিন্ন লোকায়ত নৃত্যসুষমায় রাসনৃত্য বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।