যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র ৩ দিন। দেশটির ভোটাররা আগামী ৫ই নভেম্বর তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দিবেন। নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণ কী বলছে? এবার কী ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পাবে যুক্তরাষ্ট্র? নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসবে ডোনাল্ড ট্রাম্প?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র ৩ দিন। দেশটির ভোটাররা আগামী ৫ই নভেম্বর তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দিবেন। ২০২০ সালে সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জো বাইডেন। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু গত জুলাইয়ে প্রচারণার শেষে এসে তিনি সরে দাঁড়ান ও কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন।
ফলে এখন যেই প্রশ্নটির সামনে দাড়িয়ে পুরো বিশ্ববাসী তাহলো, এবার কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট পাবে ? নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় বসবে ডোনাল্ড ট্রাম্প?
যেহেতু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। ভোটারদের পাশাপাশি তাবৎ দুনিয়ার মানুষের আগ্রহ রয়েছে পরাশক্তি দেশের এই নির্বাচন নিয়ে। হোয়াইট হাউজে যাওয়ার দৌড়ে কে এগিয়ে, ৪৭তম প্রেসিডেন্টই বা কে হচ্ছেন ? সেসব প্রশ্নের দিকেই সবার নজর।
শুরু থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু গত জুলাইয়ের শেষ দিকে প্রার্থী ঘোষণার পর নির্বাচনের মাঠে নামে কমলা হ্যারিস। এসেই, হালকা করে এগিয়ে গেলেন ট্রাম্পর চেয়ে। সম্প্রতি এবিসি নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আছেন হ্যারিস, বিপরীতে মাত্র এক শতাংশ কম অর্থ্যাৎ ৪৭ শতাংশ সমর্থন ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
অবশ্য প্রচারণার শুরুর দিকে কিছুটা হোঁচট খেয়েছিলেন হ্যারিস। পরে অগাস্টের শেষে এসে তিনি চার পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে যান। গত ১০ই সেপ্টেম্বর এই দুই রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মধ্যে যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় তা প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছিল। ওই বিতর্কের পর দুই জনেরই জনপ্রিয়তা তুলনমুলক স্থিতিশীল ছিল।
গত কয়েকদিনে ট্রাম্প ও হারিসের মধ্যে এই ব্যবধান আরো কমে আসছে। বিভিন্ন জরিপে সে সব চিত্র অনেকটাই স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও এই ধরনের জরিপ কোনো ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করা বা কারো জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সঠিক মাপকাঠি নয়। কারণ, ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। যেখানে প্রতিটি রাজ্যে তার জনসংখ্যার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্য রয়েছে। কিন্তু প্রায় সবসময় একই দলকে ভোট দেয় কিছু কিছু রাজ্যের ভোটাররা। আবার এমন কিছু রাজ্য আছে যেখানে দুই দলের প্রার্থীদেরই জয় পাওয়ার সুযোগ আছে। বলাই তারাই মুলত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বড় নিয়ামক। এই রাজ্যগুলো যুদ্ধক্ষেত্র রাজ্য বা সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত।
আমেরিকান নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’ বা ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’ বা ‘নীল রাজ্য’। ফলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু সুইং স্টেটএর দিকে নজর দেন যেখানে ভোট কোন পার্টির পক্ষে যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বোঝা যায় না।
কতগুলো সুইং স্টেট?
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুইং স্টেটে খ্যাত এমন সাতটি রাজ্যকে মূল লড়াইয়ের কেন্দ্র ভাবা হচ্ছে। যেগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোতে কেউ এগিয়ে বা পিছিয়েও নেই। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাডা ও নর্থ ক্যারোলাইনায় অগাস্টের শুরু থেকে বেশ কয়েকবার লিড হাতবদল হলেও এ মুহূর্তে সবগুলোতেই ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অন্য তিনটি রাজ্য মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে হ্যারিস আগস্টের শুরু থেকে ২ বা ৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক জনমত জরিপে পেনসিলভানিয়ায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন সামান্য ব্যবধানে এগিয়েও আছেন। ২০১৬ সালের আগে তিনটি রাজ্যই ডেমোক্র্যাটদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেগুলো রিপাবলিকানদের পক্ষ নেয়। যদিও বাইডেন ২০২০ সালে সেগুলো ফেরত আনেন এবং হ্যারিস যদি এ রাজ্যগুলোয় নিজের প্রতিনিধিত্ব তৈরি করতে পারেন তাহলে নির্বাচনে জয়লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
নির্বাচনে পেনসিলভেনিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। কেননা ওই সুইং সাতটি রাজ্যের মধ্যে এটিতে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এই রাজ্যে জয় পেলে তাদের জন্য ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজে জয় পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়।
জরিপগুলো কী বলছে?
এই মুহূর্তের জরিপ রিপোর্ট বলছে কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প সমস্ত সুইং স্টেটগুলোতে খুব কাছাকাছি ব্যবধানে রয়েছে। যখন এত কাছাকাছি ব্যবধান থাকে তখন কে জিতবে সেটি নিয়ে ভবিষ্যদ্ববাণী করাও খুব কঠিন। চলুন তাহলে আমরা অপেক্ষা করি ৫ই নভেম্বর পযন্ত। ভোটাররা কাকে নির্বাচিত করেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিশ্বে আমেরিকার নেতা হিসেবে!