মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল। জনমত জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবার। দোদুল্যমান ৭টি অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করবে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়-পরাজয়। এরই মধ্যে ৮ কোটির বেশি আগাম ভোট পড়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ভোটগ্রহণ হলেও কবে জানা যাবে ছূড়ান্ত ফলাফল, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে অনেকের মাঝে।
নির্বাচনের দিন অর্থাৎ ৫ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হবে। সাধারণত, যেসব রাজ্যের ভোট দ্রুত গণনা হয়, সেসব রাজ্যের ফল রাতেই পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: যেভাবে হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন
প্রতিটি অঙ্গরাজ্য নিজদের নিয়ম অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করে থাকে। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। তবে সাধারণত স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোট গণনা শুরু হয়।
সময়ের ব্যবধানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গণনার সময় পার্থক্য দেখা যায়। যেমন পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে যখন ভোট গণনা শুরু হয়ে যায়, তখন আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা তখনও ভোট দিতে থাকেন।
ফলাফল কখন জানা যাবে?
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল কখন জানা যাবে তা নির্ভর করছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার তীব্রতার ওপর। যদিও নির্বাচনের দিন রাতেই কিছু রাজ্যের ফল জানা যেতে পারে, তবে অনেক রাজ্যের ফল গণনা শেষ হতে একাধিক দিন বা সপ্তাহও লাগতে পারে।
প্রাথমিক ফল ঘোষণার সম্ভাবনা
নির্বাচনের দিন, ৫ নভেম্বর, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হবে। সাধারণত, যেসব রাজ্যের ভোট দ্রুত গণনা হয়, সেসব রাজ্যের ফল রাতেই পাওয়া যেতে পারে। যেমন:
জর্জিয়া: সন্ধ্যা ৭টার পর
উত্তর ক্যারোলিনা: সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর
এগুলোর পরপরই মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, এবং উইসকনসিনের মতো রাজ্যের ফল আসতে শুরু করবে।
সুইং রাজ্যগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ বলা হয় এমন কিছু রাজ্যকে যেখানে উভয় দলের জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা থাকে। সুইং রাজ্যগুলোর ফল চূড়ান্ত না হলে, নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল জানার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে। মূল সুইং রাজ্যগুলো: অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন।
যদি এসব রাজ্যে ভোটের ব্যবধান খুব কম থাকে, তবে ফল ঘোষণা কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। তবে যদি কোনো প্রার্থী এসব রাজ্যে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকেন, তাহলে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল দ্রুত জানা সম্ভব হবে।
ডাকযোগে এবং আগাম ভোটের গণনা
২০২০ সালের নির্বাচনের মতো এবারও আগাম ভোট ও ডাকযোগে ভোটের কারণে ফল ঘোষণায় বিলম্ব হতে পারে। ডাকযোগে দেওয়া ভোটের গণনা কয়েকদিন ধরে চলে এবং অনেক রাজ্যে আইন অনুযায়ী ভোট গ্রহণ শেষের পরে পৌঁছানো ডাকভোটও গণনা করা হয়।
পেনসিলভানিয়া এবং মিশিগান এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ডাকযোগে ভোট গণনা সম্পূর্ণ হতে বাড়তি সময় প্রয়োজন হতে পারে।
অনেক রাজ্যই প্রথমে ভোটকেন্দ্রের সরাসরি ভোটের ফল প্রকাশ করে, তারপর ডাকযোগে পাওয়া ভোট গণনা করা হয়। এতে শেষের দিকে প্রার্থীদের ফলাফলে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
সম্ভাব্য জটিলতা ও আইনি চ্যালেঞ্জ
যদি ভোটের ব্যবধান খুব কম হয় বা কোনো প্রার্থী নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ করেন, তবে ফল ঘোষণায় আরও বেশি সময় লাগতে পারে। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ তোলার কারণে কিছু রাজ্যের ফল চূড়ান্ত হতে সময় লেগেছিল এবং বেশ কিছু আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়েছিল। ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা এই নির্বাচনেও এমন অভিযোগ তুলতে পারেন, যা ফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণ হতে পারে।
সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফল ঘোষণার সময়
যদি কোনও প্রার্থী সুইং রাজ্যগুলোতে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে যান, তাহলে নির্বাচনের দিন বা পরের দিনই চূড়ান্ত ফল জানা যেতে পারে। তবে অনেক রাজ্যে ডাকযোগে ভোট এবং আইনি প্রক্রিয়ার কারণে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল পেতে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে, বিশেষ করে যদি নির্বাচনের ফলাফল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়।
২০২০ সালের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল জানতে চারদিন সময় লেগেছিল, এবং এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তীব্রতার কারণে ২০২০ সালের মতোই বিলম্বিত ফলাফলের সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঠিক কখন জানা যাবে তা নির্ভর করছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তীব্রতা, ডাকযোগে ভোটের সংখ্যা, এবং নির্বাচনী আইনি চ্যালেঞ্জের ওপর।