ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি শামাল দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা করে। ওই হামলায় প্রায় ১২শ ইসরায়েলি নিহত হয়। সেসময় ২০০ বেশি ইসরায়েলি নাগরিককের জিম্মি করে ফিলিস্তিনে নিয়ে যায় হামাসের সদস্যরা। এরপর গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৬ হাজার আহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের হামলার শুরুর পর বিক্ষোভ হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গাজায় হামলা শুরুর প্রায় ৭ মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে একই সঙ্গে ইহুদিবিদ্বেষ এবং ইসলামবিদ্বেষ বেড়েছে। ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক এসব উত্তেজনায় মার্কিন নেতারা শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতা কখন সীমা অতিক্রম করছে এবং হুমকি হয়ে উঠছে- সে বিষয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হয়েছে। যে কারণে কয়েকটি ক্যাম্পাস থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থীকের গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে।
১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ওই শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। পুলিশ যখন তাদের গ্রেফতার করে তার একদিন আগে ক্যাম্পাসটিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ১৭ এপ্রিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডধারী এবং কলম্বিয়ার অধিভুক্তদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয় যারা সারারাত ওই ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পুলিশের কাছে সাহায্য চাওয়া হয় জড়ো হওয়া ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেওয়ার। বিক্ষোভ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যেখানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ঘুষি দিচ্ছেন-এমন দৃশ্যও চোখে পড়েছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট লেখেন, ক্যাম্পাসে যা হচ্ছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি এবং আইনের পরিপন্থি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই বিক্ষোভকারীদের বেশ কয়েকবার সতর্কীকরণ নোটিশও দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট জানান, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় তিনিই পুলিশকে অনুমতি দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে।
১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইমারসন কলেজ, দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিন, দ্য ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান এবং দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বারক্লেতেও শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। ১৭ এপ্রিল ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সরে যেতে বলার পরও আদেশ না মানায় ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ গ্রেফতার করে ৪৫ জনকে। একইদিন ইমারসন কলেজ থেকে ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
কলম্বিয়ার ফিলিস্তিন বিক্ষোভকারী বলেছেন, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত বিক্ষোভ থামাবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলের একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ সম্পর্ক ছিন্ন না করবে। অন্যান্য ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের দাবিও একই রকম।