28 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

যেভাবে হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন

নির্বাচনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি জনসমর্থণ বা ভোট পায় সেই তো বিজয়ী হয়। কিন্তু আমেরিকার গণতন্ত্রে এই তত্ত্বটা ঠিক যেন যথার্থ নয়। অর্থ্যাৎ সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেই যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তার কোনো গ্যারেন্টি ওই দেশে নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাস তার প্রমাণ দিয়েছে বারে বারে। দেশটির অন্তত পাঁচটি ইলেকশনে জনগণের সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলো যারা, তাদের  কেউই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট হন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারী ক্লিন্টনের চেয়ে ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েছিলেন। অর্থ্যাৎ হিলারি ক্লিন্টন ট্রাম্পের চেয়েও ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েও প্রেসিডেন্ট হতে পারেন নি।

তাহলে এ কেমন গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে ?

তাহলে চলুন দেখে নেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ধরণটা কেমন! কী কারণে বেশি ভোট পেলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকে না?

৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে। সাধারণ জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কিন্তু তাদের ভোটেই সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে একটা নিজস্ব পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতিতেই হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অর্থ্যাৎ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ নয়, প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা ঠিক করে ইলেক্টোরাল কলেজ। তাহলে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কী?

এইটা বোঝার জন্য কয়েকটা সহজ তথ্য মনে রাখা জরুরী। এক. যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য, ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ। মাইন ও নেব্রাসকা এই দুটো অঙ্গরাজ্য বাদে যে প্রার্থী  ৪৮ অঙ্গরাজ্যে ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

তাহলে এবার চলুন দেখি কীভাবে কাজ করে ৫৩৮ টি ইলেক্টোরাল ভোট ?

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন, বেশিরভাগই হয় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিস অথবা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।

তবে এদের দুজনের মধ্যে কে জয়ী হবেন, সেটা ভোটারদের দেওয়া ভোটে সরাসরি নির্ধারিত হবে না। জয়ী-পরাজিত নির্ধারিত হবে একেকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে।

প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি করে ইলেক্টোরাল ভোট থাকে, জনসংখ্যা অনুপাতে সেগেুলো নির্ধারণ করা হয়। যেমন, ক্যালিফোর্নিয়ার হাতে সর্বাধিক ৫৪টি। আবার আলাস্কা কিংবা নর্থ ডাকোটা বা ওয়াশিংটন ডিসির মতো যেসব অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যা খুবই কম, তাদের হাতে অন্তত তিনটি ইলেক্টোরাল ভোট আছে।

একটি অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বেশি ভোট পায়, সেই রাজ্যের সবকটি ইলেক্টোরাল কলেজ তার হয়। যেমন ধরুণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ৪৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ বা ভোট আছে। একজন প্রার্থী যদি  ৫০.১% ভোটও পায়, তাহলে ওই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ইলেক্টোরাল ভোটই সে পেয়ে যাবে।

‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কেন বলা হয়? ‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের ‘ইলেকটরস্’ বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচক মণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয়, এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন।

ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। এই প্রথা শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যই ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সব নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সরাসরি মানুষের ভোটেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইলেক্টোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে কী হবে? কোনও ক্ষেত্রে যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইন সভার নিম্ন-কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভস ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। এই ঘটনা মাত্র একবারই হয়েছে ১৮২৪ সালে।

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল?

১৭৮৭ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লেখা হচ্ছিল, তখন বিশালাকার দেশটিতে যোগাযোগের অভাবের ফলে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব ছিল। সংবিধান রচয়িতারা তখন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

ওই সময় বাতিল করেন পপুলার ভোটের ধারণা তাদের যুক্তি ছিল পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং তার ফলে বড় রাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।

ছোট ছোট রাজ্যগুলো এই ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে কারণ এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার ভালো দিক হচ্ছে, ছোট অঙ্গরাজ্যগুলি প্রার্থীদের কাছে গুরুত্ব পায়। প্রার্থীদের গোটা দেশ ঘোরার দরকার হয় না। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলির প্রতি নজর দিলেই চলে। পুনর্গণনা সহজতর।

আর অসুবিধা হচ্ছে সাধারণ মানুষের ভোটে জয়ী প্রার্থীও নির্বাচনে হেরে জেতে পারেন। ভোটাররা মনে করতে পারে যে তাদের ব্যক্তিগত ভোটের কোনও মূল্য নেই, কথিত ‘সুইং স্টেট’ গুলির হাতে অত্যধিক ক্ষমতা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন