রিসেট বাটন ফেসবুক সার্চের ক্ষেত্রে ‘পপুলার নাউ’ ক্যাটাগরিতে চলে এসেছে। এমনকি, টুইটারে যে হ্যাশট্যাগগুলো এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ট্রেন্ড করছে, এটি তার মাঝে অন্যতম। তর্ক-বিতর্ক এতদূর গড়িয়েছে যে অনেকেই তাদের ফেসবুক পোস্টে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লিখছেন ‘স্টেপ ডাউন ইউনূস’। কিন্তু কি এই রিসেট বাটন? বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি বাংলা
যেভাবে এলো ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গ
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯-তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে বসেই গত ২৭শে সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
প্রায় ১৯ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারে তার কাছে অন্তর্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ, সেনাবাহিনীকে ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়াসহ আরও কিছু বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাওয়া হয়েছিলো।
তেমনই একটি প্রসঙ্গ ছিল— সরকার পতনের পর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের যে বাড়িটি ছিল, যেটিকে পরবর্তী জাদুঘর বানানো হয়েছে, সেটিকে ‘বিনষ্ট’ করা হয়েছে; অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শোক দিবস হিসাবে ১৫ই অগাস্টের ছুটি বাতিল করা হয়েছে; শেখ মুজিবুর রহমানের বহু ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে।
উপস্থাপকের প্রশ্ন ছিল, ‘এ নিয়ে সমালোচনা আছে। অনেকেই বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা ফ্যাসিবাদের আইকন হিসাবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতির জনক হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বীকৃত। এ ব্যাপারে আপনার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী?’
কিন্তু ড. ইউনূস উপস্থাপকের এই প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দেননি। জবাব না দিয়ে তিনিই বরং উপস্থাপককে বললেন, ‘আপনি পুরোনো দিনের কথাবার্তা বলছেন। এর মাঝে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল। আপনার বোধহয় স্মরণে নেই। আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন এসব ঘটনা ঘটেইনি। নতুন ভঙ্গিতে যা হচ্ছে, সেটিকে দেখতে হবে তো।’
‘কত ছেলে প্রাণ দিলো, সেটা নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন নাই। কেন প্রাণ দিলো?’ তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন। বলেন, ‘প্রথম স্বীকার করতে হবে যে ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; এভ্রিথিং ইজ গন; অতীত নিশ্চিতভাবে চলে গেছে। এখন নতুন ভঙ্গিতে আমরা গড়ে তুলবো। দেশের মানুষও তা চায়। সেই নতুন ভঙ্গিতে গড়ে তোলার জন্য আমাদের সংস্কার করতে হবে।”
‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্রপাত তার এই মন্তব্য ঘিরেই।
কী চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
মাত্র দুই মাস আগে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ ছিল– স্টেপ ডাউন হাসিনা। তারপর প্রায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রকাশ্য বা প্রচ্ছন্ন সমর্থন নিয়ে গত আটই অগাস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস।
কিন্তু দুই মাসেরও কম সময়ের মাঝে কী এমন হলো যে মুহাম্মদ ইউনূস এত তোপের মুখে পড়লেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন করছেন যে ‘রিসেট বাটনে পুশ’ করলেই অতীত মুছে ফেলা যায় না?
এমনকি, কেউ কেউ এও মনে করছেন, এই কথার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস প্রশ্নে মুহাম্মদ ইউনূস তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
যদিও কারও কারও মতে, এখানে কেবলই একটি ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে এবং এটিকে কেন্দ্র করে একদল মানুষ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছেন।
ফেসবুকে এই মুহূর্তে ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে যে সব পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলোর মাঝে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের এক লাইনের একটি পোস্ট অন্যতম।
অনেকেই তার ওই পোস্ট নিজ নিজ প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন। মিজ শাওন তার দেওয়া পোস্টে কটাক্ষ করে শুধু প্রশ্ন করেছেন, “রিসেট বাটনে চাপ দিলে নোবেল পুরষ্কারের কী হবে?”
আবু সাঈদ নামক একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীও মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অর্জন ও পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
“ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানি শাসন, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জন্ম, শেখ হাসিনা সরকারের সকল অতীত কর্মকাণ্ড” মুছে গেছে কি না, এই প্রশ্নও রাখেন তিনি।
যদিও তার ওই পোস্টে আদনান এইচ খান নামক একজন লিখেছেন, “এটি স্রেফ একটি উপমা।”
এমন আরও অনেকেই ফেসবুক ও টুইটারে লিখেছেন যে মুহাম্মদ ইউনূস ওই সাক্ষাৎকারে ১৯৭১ সাল তথা বাংলাদেশ গঠনের ইতিহাসকে অস্বীকার করে কথা বলেছেন।
রিসেট বাটনে চাপ দেওয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন লেখক তসলিমা নাসরিনও। তবে তার প্রশ্নটা একটু ভিন্ন।
তিনি প্রশ্ন করেছেন, মুহাম্মদ ইউনূস যে তরুণদের কথা বলছেন, তাদের মাঝে কারা রিসেট বাটন টিপেছে? মুহাম্মদ ইউনূসকে বিভিন্ন ধর্ম ও মতবিদ্বেষী তরুণরা ঘিরে রেখেছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানতে চেয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ওই তরুণদেরকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব দিতে চান কি না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘রিসেট বাটন’ লিখে সার্চ দিলে এরকম অনেক পোস্ট সামনে আসবে।