ইন্টারনেট সংযোগের ধরন বদলে দিতে পারে লাইট ফিডেলিটি বা লাই-ফাই নামের নতুন প্রযুক্তি। প্রচলিত ওয়াই-ফাই যেখানে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে, সেখানে লাই-ফাই প্রযুক্তিতে ডাটা আদান-প্রদান হয় আলোক সংকেতের মাধ্যমে। সিনেটের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লাই-ফাই প্রযুক্তি এলইডি লাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। যার কারণে এটা প্রচলিত ওয়াই-ফাইয়ের তুলনায় অনেক দ্রুতগতির হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্টারনেট আসবে আলো থেকে
গবেষকদের মতে, আদর্শ পরিস্থিতিতে লাই-ফাই প্রযুক্তির গতি প্রতি সেকেন্ডে ২২৪ গিগাবাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা ওয়াই-ফাইয়ের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ দ্রুত। তবে এখনো এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং বাস্তবিক ব্যবহারের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতার বিষয় সামনে এসেছে।
যেভাবে কাজ করে লাই-ফাই: আসলে লাই-ফাই একটি ভিজিবল লাইট কমিউনিকেশন (ভিএলসি) প্রযুক্তি, যেখানে এলইডি বাতির মাধ্যমে ডাটা প্রেরণ করা হয়। যখন বাতিটি অন-অফ হয়, তখন দ্রুতগতিতে আলোর পালস তৈরি হয়, যা বিশেষ রিসিভার ডিভাইসের মাধ্যমে সংকেত হিসেবে গ্রহণ করা যায়। সাধারণ চোখে এই পালস বোঝা না গেলেও, এটি খুবই কার্যকরভাবে তথ্য আদান-প্রদান করতে সক্ষম।
লাই-ফাইয়ের অন্যতম সুবিধা হলো নিরাপত্তা। যেহেতু আলোর সংকেত দেয়ালের ওপারে যেতে পারে না, তাই এটি ওয়াই-ফাইয়ের তুলনায় নিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে হাসপাতাল, উড়োজাহাজ, সামরিক এলাকা বা পানির নিচের গবেষণা কেন্দ্রগুলোর মতো সংবেদনশীল জায়গায় এর ব্যবহার বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে।
সীমাবদ্ধতা: যদিও লাই-ফাই অনেক সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি, তবু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আলো ছাড়া এটি কাজ করতে পারে না, ফলে রাতের বেলা বা অন্ধকার জায়গায় এর কার্যকারিতা সীমিত হতে পারে। এ ছাড়া সরাসরি আলোর সংস্পর্শে থাকতে হবে এবং বিশেষ রিসিভার ডিভাইস প্রয়োজন হবে, যা প্রচলিত ওয়াই-ফাই রাউটারের মতো সহজলভ্য নয়।
লাই-ফাই প্রযুক্তির বিকাশ ও ভবিষ্যৎ: লাই-ফাই প্রযুক্তির ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী হ্যারাল্ড হাস ও তার গবেষক দল। ২০০০ সালের শুরুর দিকে তারা পরীক্ষা করেন, কীভাবে আলো ব্যবহার করে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব। এরপর ২০০৮ সালে ফরাসি প্রতিষ্ঠান “ওলেডকম” লাই-ফাই প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ শুরু করে এবং বর্তমানে তারা এই প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারতসহ বেশ কিছু দেশে লাই-ফাই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ইউরোপে উৎক্ষেপণ করা একটি মহাকাশযানে লাই-ফাই প্রযুক্তির ওপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাও চালানো হয়, যা ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির আরও উন্নয়নের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে স্মার্ট হোম, স্মার্ট সিটি এবং শিল্প খাতে লাই-ফাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদি সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা যায়, তাহলে এটি একসময় ওয়াই-ফাইয়ের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
দেখুন: মোবাইল ইন্টারনেট