সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। দেশটি তাকে আশ্রয় দেয়ার পর এখন ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদান করেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আলোচ্য বিষয় হয়ে দাড়িছে।আর শেখ হাসিনা কে ভারত যদি সত্যিই ট্রাভেল ডুকুমেন্ট প্রদান করে থাকে তবে দুই দেশের বন্দি প্রত্যাপন চুক্তির মাধ্যমে হাসিনাকে দেশে ফিরে আনা কঠিন হবে কিনা সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।
ভারতে পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশটির পক্ষ থেকে ট্রাভেল ডুকুমেন্ট প্রদান এবং এর ফলে তাকে দেশে ফিরে আনা নিয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখেছে বিবিসি বাংলা।
বার্ত সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে সম্প্রতি ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুই শতাধিক মামলাও হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটার তাজুল ইসলামের সাথে কথা বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শেখ হাসিনা এখন যে দেশে আছেন সে দেশের সাথে আমাদের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী তারা শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য।
তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, বর্তমান ভারত সরকারের সাথে শেখ হাসিনার যে সম্পর্ক রয়েছে সেদিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশের ফেরত চাওয়া খুব বেশি কাজে নাও আসতে পারে। কারণটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক।
এদিকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরারি আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি আছে ২০১৩ সাল থেকেই।
চুক্তি অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তির নামে মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয় বা তিনি দোষী সাব্যস্ত হন অথবা দেশের আদালত কর্তৃক প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ করার জন্য ফেরত চাওয়া হয় তাহলে তাকে ফেরত দেবে বাংলাদেশ ও ভারত।
কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে সে অনুযায়ী কেউ যদি কোনো অন্যায় করে আইনিভাবে দোষী সাব্যস্ত হন, ওইরকম ব্যক্তিবর্গ যদি বাংলাদেশ বা ভারতে আশ্রয় নেয় তাহলে উভয় দেশ চুক্তি অনুযায়ী তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারে।
এই চুত্তি অনুযায়ী হাসিনাকে কি দেশে আনা যাবে।ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিটি ২০১৩ সালে করা হলেও ২০১৬ সালে মূল চুক্তিটি সংশোধন করা হয়।
সংশোধিত চুক্তির ১০ এর (৩) ধারায় বলা হয়েছে, কোনও অভিযুক্তের হস্তান্তর চাওয়ার সময় অনুরোধকারী দেশকে সেই সব অভিযোগের পক্ষে কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ না করলেও চলবে শুধু সংশ্লিষ্ট আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা পেশ করলেই সেটিকে বৈধ অনুরোধ হিসেবে ধরা হবে।
তবে কূটনীতিক বিশ্লেষকের মতে, আইন ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে সমন্বয় হলেই কেবল শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে পারে ভারত।
আর হাসিনাকে কবে ফেরত চাইতে পারে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন এর প্রধান কারণ হচ্ছে ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া। ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগের পর আদালতের কার্যক্রম শুরু হলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
তিনি যোগ করেন আদালত বসলে প্রথম দিনই আমরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ চাইব । আদালত যদি তাকে গ্রেফতারের ইনিশিয়াল অর্ডার দেয় তখন তাকে ফেরত আনতে আমরা কুটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইবো।
তবে যদি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তারপরও বাংলাদেশ চাইলেই যে তাকে ফেরত পাবে এমন কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।