20 C
Dhaka
সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

শিক্ষার্থীরা ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে কেন?

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশে বিভিন্ন খাতে সংঘর্ষ দেখা গেছে। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও রাজনৈতিক সংগঠনের লোকজন দাবি আদায় করতে গিয়ে সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন। এমনকি একসময় প্রতিবিপ্লবের শঙ্কাও জেগেছিল। সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা সেসব বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কাজ করেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। হঠাৎ ‘অশান্ত’ হয়ে উঠতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে ঢাকার কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন লাগামহীন আচরণ করছেন। যার ফলে পরিস্থিতিটা ঘোলাটে হতে শুরু করেছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে এসব শিক্ষার্থীর লাগাম কার হাতে?

গত রবিবার ভুল চিকিৎসায় অভিজিৎ হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা পাশের শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। আগের দিনের হামলার পাল্টায় গতকাল সোমবার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালানো হয়।

এ ছাড়া গত রবিবার রাতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হন অনেকে। উঠে শিক্ষার্থী মৃত্যুর গুজবও। হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজে দুদিন এবং কবি নজরুল কলেজে একদিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে ঢাকা কলেজ এবং সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোয় দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এসব সংঘাতে জড়িত শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও পড়েছেন বিপাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল রাতে জরুরি সভায় বসেন নেতারা। এরপর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা। খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের লাগামহীনতার কারণ। বৈঠকে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী ঐক্য ধরে রাখতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রনেতারা। তারা সবাইকে নিয়ে ছাত্র কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দেন।

ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলছেন, সরকারকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা না গেলে এমন সংঘাতের ঘটনা আরও বাড়বে। এ ছাড়া ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ অভ্যুত্থানের পর নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে না রাখতে পারাকে দায়ী করছেন। আর কেউবা বলছেন, ছাত্রদের এসব সংঘাতের নেপথ্যে আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ইন্ধনও থাকতে পারে।

অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ প্রশাসনের কারও ব্যর্থতা থাকলে তাদেরও পরিবর্তনের কথা জানানো হয়েছে।

মোল্লা কলেজে সংঘর্ষে আহত ২০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা  বলেন, ‘এমন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের এখনো পর্যন্ত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে না পারা। জুলাই আন্দোলনে হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারা এবং তাদের পুনর্বাসন হতে সুযোগ দেওয়াই এর মূল কারণ। এ পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে বড় দায় আমি মনে করি, মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারত, কিন্তু তারা অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে সরকারকে পুরোপুরি অসহযোগিতা করছে। সরকার পুলিশকে সংস্কার করার নামে শুধু ঝুলিয়ে রেখেছে, দৃশ্যমান কিছুই করেনি। এ দায় তাদেরও নিতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নার, ‘এমন পরিস্থিতির নেপথ্যে আওয়ামী লীগের ইন্ধন রয়েছে বলে আমরা মনে করি। তারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকছি। সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বসে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজেছি। সামনের দিনে নতুন বাংলাদেশ কীভাবে গঠন করা যায় এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ঐক্য ধরে রেখে সব ধরনের অরাজকতা ঠেকানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। আশা করি সামনের দিনে এ ধরনের পরিস্থিতি ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা মোকাবিলা করতে পারব।’

এদিকে সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এসব সংঘাতের পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন থাকলে তা খুঁজে বের করে ইন্ধনদাতাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এমনটি উল্লেখ করে বলেন, ‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সরকার তার প্রতি নজর রাখছে। আমরা ছাত্রছাত্রীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ছাত্রদের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ একটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আছে, সেই জায়গায় যখন এত এত শিক্ষার্থী নেমে এসেছে, পুলিশ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারত। পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সংঘর্ষে জড়ায়নি। পরে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। পুলিশকে আরও সক্রিয় করতেই রদবদল করছি। কারও ব্যর্থতা থাকলে তাদেরও আমরা পরিবর্তন করব।’ শিক্ষার্থীদের সংঘাত ছাড়াও বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাস্তাঘাট বন্ধের মতো ঘটনাকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। যার ফলে নির্বিঘ্নে যানবাহন ও জনচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

দেখুন: ঢাকা পলিটেকনিক ও বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে সর্বশেষ পরিস্থিতি
বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন