23 C
Dhaka
রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

সিঙ্গাপুরে এস আলমের বিশাল রাজত্ব

এস আলম নামে পরিচিত চট্টগ্রামের সাইফুল আলম তাঁর নিজের ও স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন বিশাল ব্যাবসায়িক সাম্রাজ্য। বিতর্কিত এই ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে তার বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে শুরু করেন ২০০৯ সাল থেকে, এমন তথ্যই জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ।

একটি সূত্র মতে এস আলম শুধুমাত্র হোটেল আর শপিং মল কিনতে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার বিনিয়োগ করেছে। যা টাকার অংকে প্রায় ৬ হাজার ৩ শ’ কোটি টাকা। জানা যায় সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার মালিকানাধীন মোট ৩টি হোটেল।

সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়ায় অবস্থিত গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল হোটেল। পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয়েছে হিল্টন গার্ডেন ইন। প্রায় ২৪৮ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার দিয়ে হোটেলটি এস আলম কিনেছেন বলে জানা গেছে। এস আলমের মালিকার আরেকটি হোটেল সেরাঙ্গুন এলাকায় অবস্থিত। হলি ডে ইন এক্সপ্রেস হোটেল নামের এটা কেনা হয় ৯০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার দিয়ে। ব্যাংক খাতের এই রাঘব বোয়ালের তৃতীয় হোটেলটির নাম ইবিস নভেনা। দেশটির নভেনা এলকায় অবস্থিত এই হোটেলটি কিনতে তিনি ব্যয় করেছেন ১৭০ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার।    

এসবের পাশাপাশি তিনি ১৩৫ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার দিয়ে মুস্তফা সেন্টারের কাছে সেন্ট্রিয়াম স্কয়ারের প্রথম দুইটি তলার ২৭ হাজার ১৮৯ স্কয়ার ফুট ফ্লোর কিনেছেন বলে জানা গেছে।

মোট ৪টি কোম্পানির মাধ্যমে এস আলম এসব সম্পত্তি ক্রয় করেন। এগুলো হলো কানালি লজিস্টিক্স, ক্যানোপাস টু, টলেডো ইন্টারন্যাশনাল এবং গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল। এই ৪টি কোম্পানির সাথেই এস আলমের সম্পৃক্ততার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সিঙ্গাপুরে এস আলমের এই বিশাল সম্রাজ্য গড়তে সব লেনদেনই হয়েছে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিস ব্যাংক লিমিটেড এর মাধ্যমে, এমনটাই জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ।

এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ হলো সিঙ্গাপুরের অর্থ মন্ত্রনালয়ের অধীনে সংবিধিবদ্ধ বোর্ড। এই কর্তৃপক্ষই নিশ্চিত করেছে যে সিঙ্গাপুরের ঐ ৪টি কোম্পানিতে এস আলমের নিজের, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভিন ও এস আলমের বিভিন্ন কর্মকর্তার শেয়ার রয়েছে। 

এসব বিনিয়োগের কোনকিছুতেই এস আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার তোয়াক্কাও করেননি। বেশিরভাগ টাকাই সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে অবৈধ পন্থায়। হুন্ডি করে অথবা চিনি আমাদানীর জন্য ওভার এলসি দেখিয়ে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চিনির বাজারে এস আলম গ্রুপের আধিপত্য বেশ জোরালো। আর এই চিনি এস আলম গ্রুপ আমাদানি করে সিঙ্গাপুরের একটি বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে।

অবৈধ পন্থায় সিঙ্গাপুরে টাকা পাচারে এস আলম তাঁর ইউনিয়ন ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংককে ব্যবহার করেন বলে এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন ঐ ব্যাংক দুটির দু’জন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। এছাড়া সিঙ্গাপুরে উল্লেখিত ৪টি কোম্পানির রেজিষ্টার্ড কাগজপত্রে এস আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা নিজেদেরকে সাইপ্রাসের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সিঙ্গাপুরের এস আলমের সব নথিপত্রের রেজিষ্ট্রেশনে  দু’টি বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। এই বাড়ি দুটির একটির অবস্থান থমসন রোডে। যার নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করার জন্যই এই বাড়িটি তিনি তৈরি করেন। জাগুয়ার, পোরশে’র মত বেশকিছু বিলাসবহুল গাড়ীও রয়েছে এই ভবনটিতে।

সিঙ্গাপুরের এ্যাকাউন্টিং এ্যান্ড রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই ভবনটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে জিকো ট্রাস্টের নামে হস্তান্তর করা হয়। এস আলমের সিঙ্গাপুরের বিলাসবহুল এই ৩ তলা ভবন নির্মাণে বেশ কিছু বাংলাদেশী শ্রমিক ও কর্মকর্তা কাজ করেছেন বলেও জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন