সিরিয়ায় সামরিক বাহিনী বলেছে, বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘর্ষের পর হামা শহর থেকে তারা তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করেছে। খবর ভয়েস অফ আমেরিকার। অর্থাৎ সে দেশের চলমান গৃহযুদ্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের আরও একটি বড় পরাজয় ঘটলো।
সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিদের রক্ষা করতে তারা হামা শহরের বাইরে সৈন্য মোতায়েন করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা শহরে প্রবেশ করে কারাগারের দখল নিয়েছে এবং বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে।
ভয়েস অফ আমেরিকা আরও জানায়, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রধান ও বৃহত্তম শহর আলেপ্পো অবরোধ করার কয়েক দিন পরই হামা দখল করা হলো। ২০১৬ সালের পর এটাই আলেপ্পোর উপর প্রথম বড় আঘাত। ইরান-সম্পৃক্ত মিলিশিয়া ও রুশ বিমান বাহিনী সমর্থিত সিরিয়ার সরকারি বাহিনী সে দেশে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলাকালে শহরের পূর্ব অংশ থেকে বিদ্রোহী দলগুলিকে বিতাড়ন করেছিল।
ইসলামপন্থী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম ও তুরস্কের সাহায্যপুষ্ট সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি নিয়ে গড়ে উঠেছে বিদ্রোহী দলগুলি। ২০১১ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধকে উস্কে দিয়েছে বিদ্রোহীদের আলেপ্পো ও হামা দখল। আসাদের মিত্ররা নিজেরাই যুদ্ধে জর্জরিত ও ব্যস্ত। যেমন রাশিয়া ব্যস্ত ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতে এবং ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী ব্যস্ত লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই-এ।
রাজধানী দামেস্কের প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে আলেপ্পো ও দামেস্কের মাঝখানে হামা শহরটি অবস্থিত। ১৯৮২ সালে এই শহরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল-আসাদের (বর্তমান প্রেসিডেন্টের বাবা ও পূর্বসূরি) বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী অভ্যুত্থান ঘটেছিল। সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংস দমনপীড়নের মাধ্যমে এই অভ্যুত্থান শেষ হয়েছিল। উল্লেখ্য, সেই ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে হঠাৎ করেই বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাচ্ছে একের পর এক বড় শহর। এমন পরিস্থিতে সেখান থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। কারণ সরকারি বাহিনীও সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত সপ্তাহে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল করে। এরপর বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) তারা হামা দখলে নেয়। যেখানে দশ লাখের বেশি মানুষের বসবাস।
তবে এই দুইটি শহর দখল করেও থেমে নেই বিদ্রোহীরা। তারা এখন হোমস শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যেটি কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্রোহীরা আশ্চর্যজনকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় তারা বাসার আল আসাদ বাহিনীর কোনো বাধার মুখেই পড়ছে না।
জানা গেছে, হোমস শহর বর্তমানে বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। কারণ এটি দেশটির রাজধানী দামেস্ককে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়ায় অবস্থিত রুশ দূতাবাস নিজেদের নাগরিকদের দ্রুত দেশটি ছাড়তে আহ্বান জানিয়েছে।