19 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

সূর্য হঠাৎ হারিয়ে গেলে কী হবে?

সূর্য আপনাকে যে বলে আকর্ষন করছে, আপনি এবং আমি যদি ০.০০০৭৫ মিটার দূরত্বে দাঁড়াই তাহলে আমরাও পরষ্পরকে একই বলে আকর্ষন করব।

কিন্তু আমরা নিজেদের মধ্যে মহাকর্ষ টের পাই না, কারণ পৃথিবীতে পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের সামনে আমাদের এই ক্ষীন মহাকর্ষ বল কিছুই না বলা চলে।

৯৩ মিলিয়ন মাইল দূরে থাকা সূর্যের মহাকর্ষ আমাদের উপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না, যেন সূর্য নেই! ভর আছে এমন যেকোনো বস্তুরই মহাকর্ষ বল থাকে। পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য এমনকি আপনারও মহাকর্ষ আছে।

সত্যিই যদি সূর্য না থাকে, তাহলে কেমন হবে?

বিলিয়ন বছর পরে সূর্য আরও ফুলে ফেঁপে উঠে আমাদের সাগর-মহাসাগর সব শুষ্ক করে দিয়ে আমাদের পৃথিবীটাকে মেরে তারপর মরে যাবে। হঠাৎ করে সূর্য অদৃশ্য হয়ে যাবে না, পদার্থ ও শক্তি হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায় না। যদিও কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের মাধ্যমে পদার্থ ও শক্তি এক জায়গা থেকে অন্য কোথাও চলে যায়, কিন্তু সূর্যের মত বিপুল ভরবিশিষ্ট বিশাল একটি বস্তুর ক্ষেত্রে এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই।

তবু তর্কের খাতিরে প্রশ্ন করি, সূর্য ছাড়া পৃথিবীর কিভাবে চলবে?

যেই মুহুর্তে অদৃশ্য হয়ে যাবে, ঠিক সেই মুহুর্তে আমরা পৃথিবীবাসী কিছুই টের পাব না। কারণ সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময় নেয়। এই সাড়ে ৮ মিনিট পর পৃথিবীর আকাশ যখন হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাবে তখন আমাদের আতঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক।

পৃথিবীর উপর এর যে মহাকর্ষীয় প্রভাব, সেটাও হারিয়ে যেতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ডই লাগবে। কারণ মহাকর্ষীয় তরঙ্গও আলোর গতিতে প্রসারিত হয়।

What if the Sun disappeared

কিন্তু যেই পৃথিবীর উপর থেকে সূর্যের মহাকর্ষীয় প্রভাব শেষ হয়ে যাবে, অমনি পৃথিবী একে ঘিরে তার কক্ষপথের স্পর্শক বরাবর ছুটে বেরিয়ে যাবে।

এই ছুটে চলার সময় সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলোকে কিন্তু আমরা আগের অবস্থাতেই দেখতে পাব কিছু সময়, যা আমাদের আতঙ্ককে বাড়িয়ে তুলবে আরও। যেমন, বৃহস্পতি তার কক্ষপথে চলতে থাকবে এবং আলো প্রতিফলিত করতে থাকবে। সূর্য যে নেই এটা জানার পর থেকে আরও ৩০ মিনিট বৃহস্পতির এই আচরণ আমরা দেখতে পাব। গ্রহটি কোথায় আছে, তার উপর নির্ভর করে আরও ৩০ মিনিট বা এক ঘন্টা পর তা আলোর প্রতিফলন শেষ হবে।

সূর্য বা চাঁদের আলো হারিয়ে আমাদের আলোর উৎস হিসেবে বাকি থাকবে শুধুমাত্র বিশ্বজগতের আলো। আমাদের এই গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের আলো দিয়ে আমরা আমাদের চারপাশ কিছুটা দেখতে পাব। বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়েও আমাদের চলবে বেশ কিছুদিন।

সূর্য হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সব গাছপালার সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ হয়ে যাবে। পৃথিবীর ৯৯.৯% প্রাকৃতিক উৎপাদন এই সালোকসংশ্লেষণের উপর নির্ভরশীল। এই বিক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে গাছ কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নেবে না, অক্সিজেনও ত্যাগ করবে না। পৃথিবীর ৭ বিলিয়ন মানুষ আমরা, প্রতিবছর ৬,০০০,০০০,০০০,০০০ কিলোগ্রাম অক্সিজেন শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করি। আর আমাদের বায়ুমণ্ডলে মজুদ আছে ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ কিলোগ্রাম অক্সিজেন। ফলে অক্সিজেন গ্রহণকারী সকল জীবসহ আমাদের শ্বাস-প্রশাসের জন্য প্রায় ১০০০ বছরের অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলে থাকছে।

কিন্তু পৃথিবীর উদ্ভিদরাজি মরে যাবে। ছোট গাছগুলো একদিন বা এক সপ্তাহের মাথায় মারা যাবে। আর বড় বৃক্ষজাতীয় গাছগুলো সঞ্চিত খাদ্য দিয়ে বছরখানেক সময় টিকে থাকতে পারবে। তবে তাদের জন্য সমস্যা আসবে অন্য দিক দিয়ে। কারণ সূর্যের অনুপস্থিতিতে পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকবে। ঠান্ডায় বৃক্ষগুলোর ভেতরে থাকা পানি জমে বরফ হয়ে যাবে। ফলে না খেতে পেয়ে মরার আগেই এসব মহীরুহ ঠান্ডায় জমে মারা যাবে।

পৃথিবীতে জীবনধারণের জন্য সুবিধাজনক তাপমাত্রা ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সূর্যের অনুপস্থিতিতে পৃথিবী তার নিজস্ব তাপ বিকিরণ করতে করতে শেষ করে ফেলবে। এটি হারিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মানুষ টিকে থাকতে অভ্যস্ত। কিন্তু এক বছর পর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা -৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকবে।
কিন্তু পৃথিবীর নিজস্ব উষ্ণতা রয়েছে। এর ২০% পৃথিবী অর্জন করেছে এর সৃষ্টির সময়। বিশাল ভর সংকুচিত হয়ে আছে এর কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রের উৎপন্ন তাপে পাথরও গলে যায়। বাকি ৮০% তাপ আসে কেন্দ্রে থাকা তেজষ্ক্রিয় মৌলের ক্ষয় থেকে। সব মিলিয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রের তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৫০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সূর্য হারিয়ে গেলে এই কেন্দ্রের কাছাকাছি অথবা মাটির নিচে পারমাণবিক শক্তির উপর নির্ভর করেই মানবজাতিকে টিকে থাকতে হবে, অথবা এক বছরের মধ্যে মরতে হবে।

পরের ১০-২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী শিশিরে ঢেকে যাবে। না, পানির শিশির নয়, বাতাস জমে শিশিরে পরিণত হবে! বাতাস ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হবে, সেই মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে। মানুষকে সেখান থেকে অক্সিজেনের শিশির সংগ্রহ করে আনতে হবে, আগুনে গলিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী করে নিতে হবে।

সূর্য হারিয়ে যাওয়ার এক থেকে তিন বছরের মধ্যে পৃথিবীর সব মহাসাগর জমে বরফ হয়ে যাবে। কিন্তু বরফ যেহেতু পানির চেয়ে হালকা এবং তাপ অপরিবাহী, তাই মহাসাগরে এক মাইল পুরু বরফের স্তর জমে থাকলে তার নিচেও পানি থাকবে। এই পানি সমুদ্রতল থেকে পাওয়া পৃথিবীর তাপে তরল থাকবে। পৃথিবীর এই অংশে রাসায়নিক সংশ্লেষণে সক্ষম অণুজীব বেঁচে থাকবে। এই পরিবেশে এসব অণুজীব স্বাধীন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ, সূর্য থাকলে বা না থাকলে তাদের কিছুই এসে যাবে না। তারা বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকবে সেখানে।

অর্থাৎ পৃথিবীর অবস্থা দাঁড়াবে একটি সুপ্ত বীজের মত, একটি মহাকাশযানের মত যে কিনা প্রাণ নিয়ে মহাশূন্যে ছুটে চলেছে প্রতি ঘন্টায় ৬৭,০০০ মাইল বেগে। এভাবে এক বিলিয়ন বছর পর ৯০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ কিলোমিটার বা এক লক্ষ আলোকবর্ষ দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলবে পৃথিবী। হয়তো হয়তো এভাবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকেও বের হয়ে যাবে গ্রহটি। অথবা অন্য কোনো নক্ষত্রের অধীন হয়ে আবার প্রাণের উন্মেষ ঘটাবে নতুন করে। নতুন সেসব প্রাণ থেকে বিবর্তিত হয়ে বুদ্ধিমান প্রাণের উদ্ভব ঘটবে হয়তো আবারও, যারা মাটি খুঁড়ে বের করবে আমাদের অবশেষ। এমনও তো হতে পারে তারা এই অনুষ্ঠানটি খুঁজে পাবে! সেক্ষেত্রে নতুন বুদ্ধিমান প্রাণীদের উদ্দেশে বলছি: হাই! আপনাদের এই গ্রহের ইতিহাস অন্বেষণে স্বাগতম!

দেখুন: সূর্য ভেঙ্গে দুই টুকরো হয়ে গেছে!এ সবই কী কেয়ামতের আলামত?

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন