বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচারিক রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেছেন, “হাইকোর্টের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এখন সব প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চাই।” গত ১৬ মার্চ রোববার হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর আবরারের বাবা এই প্রতিক্রিয়া জানান।
এর আগে, বহুল আলোচিত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ২০ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা বহাল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, ৫ আসামির যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রেখেছে আদালত। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান এবং বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়টি ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান,
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কেবি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন, নূর মোহাম্মদ আজমী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ। আসামিপক্ষে আইনজীবী মাসুদ হাসান চৌধুরী এবং আজিজুর রহমান দুলু উপস্থিত ছিলেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর রাতে, যখন বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ও কর্মী পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জন বুয়েট শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এর মধ্যে ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি, যখন মামলার নথি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
আবরারের পরিবার এবং সমাজের মানুষের কাছে এই হত্যা মামলার রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিচারপ্রক্রিয়ার সঠিক ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলেন। বরকত উল্লাহ আরও বলেন, “আজকের রায়ে আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। আমরা চাই, এই রায় দ্রুত কার্যকর হোক, যাতে আবরারের পরিবার সঠিক বিচার পায় এবং এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতে আর না ঘটে।”
এ ঘটনায় পুরো জাতি স্তম্ভিত হয়ে যায় এবং এই হত্যাকাণ্ডটি জাতীয়ভাবে বেশ আলোচনায় আসে। আবরারের পরিবার, সহপাঠী এবং সামাজিক বিভিন্ন মহল ন্যায়বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছে। আদালতের এই রায় কার্যকর হলে আবরার ফাহাদ হত্যার ন্যায়বিচারের পথ খুলে যাবে এবং ভবিষ্যতে এমন অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেওয়া হবে।
বুয়েটের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুধু তার পরিবার নয়, পুরো জাতি শোকাহত। আজ এই রায় প্রমাণ করেছে যে, বিচার ব্যবস্থা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। যদিও ন্যায়বিচারের এই দীর্ঘ অপেক্ষা এবং প্রক্রিয়া কিছুটা কষ্টকর ছিল, তবে হাইকোর্টের রায় এই ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই মামলার রায় শুধুমাত্র আবরারের পরিবারের জন্যই নয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতা রোধের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ জানান, তিনি আশা করেন, মামলার পরবর্তী প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং রায় কার্যকর হবে, যাতে তাঁর সন্তান এবং পরিবার ন্যায়বিচার পেতে পারে।
পড়ুন: আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা : হাইকোর্টের রায় ঘোষণা চলছে
দেখুন: চেক ডিজঅনার মামলা: হাইকোর্টের রায় আপিলে স্থগিত |
ইম/