পশ্চিম বাংলার হাওড়া রেল স্টেশনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা অজানা ইতিহাস। ব্যতিক্রমী একটি ঘটনা হলো, এ স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম সংখ্যা ২৭টি। তবে, ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম নেই। এই না থাকার কারণটিও নাকি বেশ জোরালো।
ভারতীয় রেলে অন্ততপক্ষে ৭ হাজারের বেশি রেলস্টেশন রয়েছে। হাওড়ার রেল স্টেশনে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করেন। হাওড়া স্টেশনে রয়েছে ১ থেকে ১৫ নম্বর পর্যন্ত প্ল্যাটফর্ম, যেগুলি রয়েছে ওল্ড কমপ্লেক্সের মধ্যে। এরপর রয়েছে ১৭ থেকে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। যেগুলির অবস্থান নিউ কমপ্লেক্সের মধ্যে। এই দুইয়ের মাঝে যে ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার ছিল সেখানে রয়েছে একটি ডেডিকেটেড লাইন। যেটি ব্যবহার করা হয় পণ্য পরিবহনের জন্য। ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম যেখানে থাকা দরকার সেই জায়গাটিকে জিরো মাইল হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
ইতিহাসের ঘেটে দেখা যাবে, ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট এই জিরো মাইল থেকেই বাংলায় প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু করে। প্রথমবার ট্রেনটি হাওড়া থেকে হুগলির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। সকাল সাড়ে আটটায় রওনা দেওয়া ট্রেনটি হুগলি থেকে দুপুর একটার সময় হাওড়ায় ফিরে আসার সূচি ছিল। প্রথম দিনে ট্রেনটির দু’ঘণ্টা দেরি হয়।
বাংলায় প্রথম যে স্টিম ইঞ্জিন হাওড়া থেকে হুগলি ছুটে গিয়েছিল সেটি দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। মাঠের মাঝে লাইনের উপর দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এ কেমন যান ছুটে যাচ্ছে, তা নিয়ে সেই সময়ই অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা ছিল না। সেই সময়ই বাংলার বুকে ছোটা প্রথম ট্রেনটিকে অনেকেই বলতেন ‘আগুনের রথ’।
একটা স্টিম ইঞ্জিনকে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে মাঠঘাট পেরিয়ে ছুটতে দেখে অবাক হয়ে যান সকলেই। পাশাপাশি, সবাই ওই ট্রেনকে “আগুনের রথ” নামেও ডাকতে শুরু করেন। আবার সেই “রথ”-এ চেপেই এক শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোক দাবি করেছিলেন যে, রথ ছ’দিনের পথকে মাত্র ৬ ঘন্টায় অতিক্রম করে ফেলতে পারে। তাতে চলাচল করলে নিশ্চিতরূপে মানুষের আয়ু কমে যেতে পারে। যদিও, কালের নিয়মে বর্তমান সময়ে দেশের গণপরিবহণের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ট্রেন।