প্রায় ৪শ বছর ধরে মেক্সিকোতে বসবাস করা দেশটির সবথেকে পুরনো কালো মানুষদের সম্প্রদায়টির অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। পালিয়ে আসা দাস-দাসীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সম্প্রদায় হারিয়ে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দারিদ্রের কারণে। মেক্সিকোতে বসবাসরত এ সম্প্রদায়ের ১০১ বছর বয়সী নারী মামা কোইন্টার। তার জন্মদিন উদযাপন করতে আসেন অতিথিরা।
কোইন্টাকে ফুলের তোঁড়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে তার সঙ্গে করমর্দন করেন তার বন্ধু ভিক্টোর। কোইন্টার ছেলে ডন অ্যামাডো তাদের বাসাতে অতিথিদের স্বাগত জানান। অ্যামাডো জানান, ‘‘আমাদের বাড়ির মতো ঘর এখানে আর নেই।” অ্যামাডোর বাড়ি ওয়াক্সাকার টেকোইয়ামিতে। ঘরের সামনে খড়ের ছাউনি ছড়িয়ে থাকা জানালাহীন একটি এক রুমের ঘরে কোইন্টার সঙ্গে অ্যামাডোর বেড়ে ওঠা।
অ্যামাডো জানিয়েছেন, ‘‘আগামী বছর হয়তো এ বাড়ি আর থাকবে না। কোনো সহায়তা নেই, অর্থ নেই। জলবায়ু আরও চরম হচ্ছে। জীবনযাত্রা ঝুঁকিতে পড়েছে। আমাদের সবাই ভুলে গেছে।’’
এল রেডান্ডো নামে পরিচিতি মামা কোইন্টার বাড়িটি প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে প্রায় ৪শ কিলোমিটার বিস্তৃত কোস্টা চিকা নামক এলাকায়। ১৩ কোটি মানুষের দেশটির সবথেকে বেশি আফ্রো-মেক্সিকান নাগরিক এ এলাকায় বসবাস করে। দীর্ঘমেয়াদী শুষ্ক মৌসুমের কারণে এই এলাকায় সম্প্রতি খরা দেখা দিয়েছে। যে কারণে বৃষ্টির ঋতুতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে পারছে না টেকোইয়ামি এবং এর আশপাশের অঞ্চলের মাটি।
১৬ শতাব্দিতে ম্যাক্সিকোতে আফ্রিকান দাসরা এই ধরনের বসতি নির্মাণ করেন। ওই দাসদের মেক্সিকোতে নিয়ে আসে স্প্যানিশরা। মালিকদের দাসত্ব থেকে বের হতে সক্ষম হয় ওই আফ্রিকানদের একটি অংশ। এই অংশ মেক্সিকোর বিশাল উপকূলীয় এলাকা দিয়ে নিরাপদে সরে পড়ে। দাসভর্তি জাহাজগুলো সমুদ্র উপকূলের যে স্থানে এসেছিলো সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের টেকোইয়ামিতে বসতিগুলো গড়ে উঠেছে।
এসব বসতি নির্মাণে তখন যা সহজপ্রাপ্য ছিলো সেগুলোই ব্যবহার হয়েছে। মামা কোইন্টার মতো বাড়িগুলো শতশত বছর ধরে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মেক্সিকানদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। কোইন্টার ঘরের খাবার, নাচ এবং যে সংগীত রয়েছে তাও আফ্রিকার ঐতিহ্যের বাহক।